বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

কৃষিকাজ ছেড়ে মাছ চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই যুবক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি 

কৃষিকাজ ছেড়ে মাছ চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই যুবক

মাছ চাষে ভাগ্য খুলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পীড়াশন গ্রামের মৎস্যচাষি শরিফুল ইসলাম ও মিন্টু আলীর। একসময় দরিদ্রতা জেঁকে বসলেও এখন মাছ চাষ করেই বছরে আয় করছেন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।

শরিফুল ইসলাম মাছ চাষের আগে কৃষিকাজ করতেন। প্রায় ৮ বছর আগে তিনি মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত হন। শুরুতে সুবিধা করতে না পারলেও পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মাছ চাষ শুরু করলে তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি শরিফুলকে।

মাছচাষি শরিফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে তিনি প্রায় ১৬ বিঘার ২টি পুকুর লিজ নিয়ে কার্প-জাতীয় মাছ উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করছেন। পুকুরে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের পোনা ছাড়েন, প্রায় ৫ মাস সময়ের মধ্যে একেকটি মাছ ৪-৫ কেজি ওজনের হয়ে উঠে। এরপর তিনি বিক্রির প্রস্তুতি নেন। দুটি পুকুরে বছরে দুইবার মাছ ছাড়েন এবং বড় হলেই সেগুলো বিক্রি করেন। 

শরিফুল বলেন, দুটি পুকুরে একবার মাছের পোনা ছাড়া, মাছের খাবার, শ্রমিক খরচ, লিজ ও পরিবহনসহ আনুষাঙ্গিক সবমিলিয়ে ১৬-১৭ লাখ টাকার খরচ হয়। আর দুটি পুকুরের মাছ বিক্রি হয় প্রায় ২০-২২ লাখ টাকার। এভাবে বছরে তিনি দুই দফায় প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন। 

পীড়াশন গ্রামের আরেক মৎস্যচাষি মিন্টু আলী। তিনিও একসময় কৃষি কাজ করতেন। বেশি লাভ হওয়ায় কৃষি কাজ ছেড়ে মাছ চাষ শুরু করেন। আর এজন্য প্রথমে তিনি প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি থেকে মাছ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। 

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন পুকুরের কোন স্তরে কি কি মাছ ছাড়তে হবে, কিভাবে মাছের পরিচর্যা করতে হবে, কোন কোন খাবার মাছকে দিতে হবে। এছাড়া নিয়মিতি মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রতিদিন মাছকে খাবার দেয়া ইত্যাদি বিষয়েও ধারণা পান প্রশিক্ষণ থেকে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সহায়তা হিসেবে মাছ চাষের উপকরণও পান প্রয়াস থেকে।

এরপর শুরু করেন মাছ চাষ। এজন্য প্রয়াস থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণও নেন। তিনি আরও জানান, মাছ চাষ করেই তিনি নতুন বাড়ি করেছেন, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। আগামীতে মাছ চাষ করেই ভাগ্যের চাকা আরো সচল করার স্বপ্ন দেখছেন।

মাছ চাষ লাভবান হওয়ায় তাদের মতো এই এলাকার অন্যরাও মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান শরিফুল ইসলাম ও মিন্টু আলী।

প্রয়াসের মৎস্য ইউনিটের মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ও প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির বাস্তাবায়নাধীন সমন্বিত কৃষি ইউনিটের (মৎস্য খাত) আওতায় আমরা মাছ চাষ সম্প্রসারণে মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। তারই ধারাবাহিকতায় এমনি একটি প্রযুক্তি কার্প-জাতীয় মাছ মোটাতাজাকরণ। এটি বাস্তবায়ন করে চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। 

প্রয়াসের মৎস্য কর্মকর্তা রাজ্জাক বলেন, তাদের প্রচেষ্টায় চাষিরা মাছ চাষকে সহজেই আয়ত্ত করতে পারছেন এবং তারা পুকুরের সব স্তরকে ব্যবহার করে কম সময়ে বেশি মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

টিএইচ