কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে যশোরের কেশবপুরে পশুর হাট। কোরবানির পশু কেনাকাটায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ার মত। কেশবপুর সদর পশুহাট, সরসকাটি, মঙ্গলকোট, সাতবাড়িয়া, চিংড়া, শুড়িঘাটা ও ভান্ডারখোলা বাজার। এই মোট ৭টি পশুর হাট বসেছে কেশবপুরে। এসব হাটে প্রচুর দেশি গরু উঠেছে।
অন্য ভ্রাম্যম্যাণ পশুহাটে অল্প পরিমান ভারতীয় গরু দেখা গেলেও কেশবপুর শহরের পশুহাটে চোখে পড়েনি। এখানে শুধু দেশীয় খামারে পালিত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ায় পরিপুর্ণ। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদ-উল আযহা। ক্রেতারা শেষ বেলায় গরু বা কোরবানির পশু কেনার জন্য ছুটছেন পশুহাটে।
জানা গেছে, কেশবপুর সদর পশুহাট সোমবার ও বুধবার। বুধবার ছিল কেশবপুর শহরের কোরবানির পশুর শেষ হাট। সকাল থেকে ক্রেতা বিক্রেতাদের জমজমাট বেচাবিক্রি লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় গরু না থাকায় এসব হাটে এ বছর দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশি। এতে সন্তষ্ট খামারি ও দেশীয় গরু ব্যবসায়ীরা।
লক্ষ্য অনুযায়ী মূল্য পাওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে না খামারিদের। একইভাবে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে পশু কিনছেন ক্রেতারা। তাই বিক্রিতেও রয়েছে প্রতিযোগিতা। এ বছর পশু হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশী।
কেশবপুর উপজেলা সদরের পশুহাট মালিক ওয়াহেদুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার প্রচুর পরিমানে দেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া আমদানি হয়েছে। বেচা বিক্রিও অনেক বেশী। কেশবপুরের পশুহাটটি অনেক পুরাতন একটি হাট। এটি যশোর সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পশুহাট হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া জাল টাকা সনাক্তকরণ মেশিন থাকাসহ বাজারের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতা বিক্রেতারা আসছেন এবং নির্ভয়ে বেচাকেনা করছেন।
প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার গরু বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা দামের গরু বাজারে এসেছে। গ্রামগঞ্জের মানুষ শেষ মুহুর্তে কেনাকাটা করে থাকে। তাই শেষ মুহুর্তে আরো বেশী পশু বিক্রি হওয়া এবং বাজার আরো জমজমাট। উপজেলার বাগদহা গ্রাম থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী হবিবুর রহমান হবি বলেন, বাজারে ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরু বিক্রি বেড়েছে। বেশী গরু বিক্রি হওয়ায় আমরা খুশি।
কোরবানির পশু কিনতে আসা অনেকেরই অভিযোগ, অন্য বছরের তুলনায় এবছর পশুর দাম অনেক বেশী। ভারতীয় গরু না আসার অজুহাতে দেশি গরুর আকাশ ছোঁয়া দাম হাকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গরুর দাম বেশী থাকার কারণে অনেকে কোরবানির জন্য ছাগল কিনছেন। মনিরামপুর উপজেলার আমিনপুর গ্রাম থেকে আসা ক্রেতা রাফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের এলাকায় পশুর দাম বেশী হওয়ায় এখানে এসেছি। কিন্তু এখানেও অনেক দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। দাম বেশী হলেও অসংখ্য পশুর মধ্য থেকে তাদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে পছন্দসই পশুটি কিনতে পেরে খুশি তারা।
কেশবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার অলোকেশ কুমার বলেন, কেশবপুরের সাধারণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করে ও সার্বক্ষনিক তদারকির কারণে কেশবপুরে পশু উৎপাদিত হয়েছে প্রচুর। চলতি বছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে গরু উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৫২২ টি ও ছাগল উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৮ টি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। পশু অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ও সার্বক্ষনিক তদারকিতে কেশবপুর খামারি ও কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক পশু উৎপাদন হয়েছে।
কেশবপুর থানার ওসি মো. জহিরুল আলম বলেন, কোরবানির পশুর হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণের যাবতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও জাল টাকা ব্যবসায়ী চক্রদেরকে সনাক্ত করতে জাল টাকা পরীক্ষার জন্য মেশিন বসানো হয়েছে।
টিএইচ