সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

খুলনায় কাজে আসেনি ভদ্রা নদীর খনন

খুলনা ব্যুরো 

খুলনায় কাজে আসেনি ভদ্রা নদীর খনন

১৯৯০ সালের দিকে ভদ্রা নদী ভরাট হতে শুরু করে। একসময় পুরোপুরি ভরাট হয়ে যায়। ভরাট হওয়া নদীটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খনন করে। কিন্তু সেই খনন কোনো কাজে আসেনি। বছর দুয়েকের মধ্যে আবারও ভরাট হয়ে নদীটি গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

খনন করা নদীটি দ্রুত আবারও ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয় আব্দুল করিম খান নদীটির আড়াআড়ি একটি বাঁধকে দায়ী করেন। ওই বাঁধটি নদী শুকিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। খননের সুবিধা পাওয়া অর্থাৎ নদীকে সচল করতে ওই বাঁধটি অপসারণ করা জরুরি ছিল, কিন্তু প্রভাবশালীদের কারণে ওই বাঁধ বা রাস্তা অপসারিত হয়নি; ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, নদীটি আবারও শুকিয়ে গেছে।

এর ফলে খনন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা ৪৬ কোটি টাকা সম্পূর্ণ বিফলে গেছে, কোনো কাজে আসেনি। 

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে এক জনসভায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বুকচিরে বয়ে চলা ভদ্রা নদী খননকাজের উদ্বোধন করেন। 

যা পাউবো ২০১৯ সালের ৩০ জুন ভদ্রা-সালতা খনন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভদ্রা নদীর ২১ কিলোমিটার ও সালতা নদীর ৯ কিলোমিটার খনন করে। খনন করা ভদ্রা নদীটির বেশির ভাগ স্থানই এখন শুকিয়ে গেছে।  

সরেজমিন দেখা যায়, ভদ্রা নদীটি খননের আগে খর্নিয়া ইউনিয়নের গোনালী গ্রাম ও শোভনা ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের জন্য নদীটিতে আড়াআড়িভাবে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, যা নদী খননের সময় অপসারণ করা হয়নি।

ফলে রাস্তাটি নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ হিসেবে থেকে যায়। এতে জোয়ারের পানি এসে ওই স্থানে বাঁধা পেতে থাকে। বাঁধাপ্রাপ্ত স্থানে জোয়ারে আসা পলি জমতে শুরু করে, যা দ্রুত নিম্নাংশের সাত কিলোমিটার ভরাট করে ফেলে। 

গাবতলা থেকে তেলিগাতী পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এখন পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। ১৬ ফুট গভীরতার খনন করা এই নদীটি এখন গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিলের পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য খনন করা এই নদীর বুক এখন বিল-ভূমি থেকে উঁচু হয়ে পড়েছে। নদীর কোনো কোনো স্থানে আবার মাটির ঘেরা দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আবার কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। কেউ কেউ নদীর বুকে চাষও করছে।

শোভনা গ্রামের বাসিন্দা শোভনা ইউপির সাবেক সদস্য শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভদ্রা নদীর দক্ষিণের গ্রাম শোভনা। গ্রামটি সবজি, কুল, পেয়ারাসহ কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এসব উৎপাদিত পণ্য এবং চিংড়ি আনা-নেয়ার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে নদীর মধ্যকার রাস্তাটি খননের সময় অপসারণ করা হয়নি। কিছু মানুষের সুবিধার জন্য রাস্তাটি রেখে দেয়ায় খনন করেও আর নদী সচল করা যায়নি।

শোভনা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল গণি বলেন, ভদ্রা ও সালতা নদী দুটি ডুমুরিয়ার প্রাণ। নদীটি খননের সময় ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। প্রভাবশালী অনেকের স্থাপনা রক্ষা করতে গিয়ে আঁকাবাঁকা করে খনন করা হয়েছে। তাছাড়া একটি খোঁড়া অজুহাতে গাবতলায় নদীর মাঝ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি অপসারণ না করে রেখে দেয়া হয়। এতে ওই স্থানে জোয়ারের পানি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে পলি জমে ভরাট হতে শুরু করে, যা অতিদ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাজকিয়া জানান, সেই সময়ে নদী দুটির নাব্যতা ফিরে পেতে খননের ব্যয় ছাড়াও ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্লুইস গেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, যা পরে বাতিল করা হয়। বর্তমানে নদী দুটি প্রায় আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে। নদী দুটি সচল রাখতে ছোট ছোট সংযোগ খালগুলো খনন করা প্রয়োজন।

স্থানীয় এমপি ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ভদ্রা ও সালতা নদী খনন করা হয়। খননের পর সরাসরি জোয়ার-ভাটা করানো হয়নি। জোয়ারের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গাবতলা থেকে ভরাট শুরু হতে থাকে, যা বর্তমানে তেলিগাতী পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। নদীগুলো খনন করে যদি একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ স্থাপন করে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া না করা যায় তবে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

টিএইচ