দুই ও তিন ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খননে উজার হচ্ছে ফসলি জমি। বিলজুড়ে শত শত হেক্টর জমিতে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বন্ধের চেষ্টায় প্রশাসন অভিযান চলমান রাখলেও রাতের আঁধারে ক্ষমতাসীনরা কোনকিছুই মানছে না। এতে গুরুদাসপুরের চাষিরা খুবই অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তারা প্রশাসনের কাছে এর প্রতিকার চাই।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নেই পুকুর খনন চলছে। কিছু সংস্কার, কিছু ফসলি সমতল জমিতে, কিছু অনাবাদি নিচু জমিতে ও ইটভাটায় মাটি দেয়ার নামে পুকুর খনন করে বেশী দামে মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন জায়গায়। অসচেতনভাবে রাশিয়ান ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহনে নষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকার পাকা রাস্তা।
ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের জন্য অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা আক্তার। জনসচেতনতায় উপজেলাব্যাপী মাইকিং করে পুকুর খনন বন্ধের নির্দেশনা প্রচার করেছেন প্রশাসন।
উপজেলার মশিন্দা থেকে চাপিলা, খুবজিপুর থেকে ধারাবারিষা অভিযান পরিচালনা করে জেল- জরিমানা, ব্যাটারি জব্দ, ভেকু জব্দ করে প্রায় অধিকাংশ বন্ধ করতে পারলেও ক্ষমতাসীনরা কৌশলে ফসলি জমিতে রাতের আঁধারে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করছে। বর্তমান এমপির খুবই নিকটতম লোকজনের কব্জায় রয়েছে পুকুর খননের সিন্ডিকেট। এবং তারাই মানছে না কোন বাঁধা।
গুরুদাসপুর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালে এ উপজেলায় ফসলি জমির পরিমাপ ছিল ১৬ হাজার ৬০৯ হেক্টর। চলতি বছরে ফসলি জমির পরিমাপ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার হেক্টরে। ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ফসলি জমি কমেছে ১ হাজার ৬০৯ হেক্টর।
কৃষি অফিসার মো. হারুনর রশীদ বলেন, এভাবে ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করায় মারাত্মক ফসলহানি হচ্ছে। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে পুকুর খনন করায় প্রতিবছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমি।
বিয়াঘাট ইউনিয়নের হাড়িভাঙ্গা বিলের জ্ঞানাদনগর মৌজার কৃষক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ইউএনওর অভিযানে আশেপাশের সকল ভেকুই বন্ধ থাকলেও জেলা পরিষদের সদস্য সরকার মেহেদী হাসান বর্তমান এমপির নিকটতম হওয়ায় ভেকু পুনরায় আবার রাতের আঁধারে চালাচ্ছে। এবং জ্ঞানাধানগর মৌজার অধিকাংশ ফসলি জমিই পুকুর খনন করে প্রায় শেষ প্রান্তে নিতে চলছে। এমপি সংসদে পুকুর খনন বন্ধের কথা বললেও এখানে এমপি সাহেবেরই নিকটতম ব্যক্তি বিশেষ ক্ষমতা বলে পুকুর খনন করছে।
নাটোর জেলা পরিষদের সদস্য সরকার মেহেদী হাসানের মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা আক্তার বলেন, অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। অবৈধ পুকুর খননকারী যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড মেম্বারকে বলা হয়েছে রাতের আঁধারে পুকুর খনন করলে তথ্য দেয়ার জন্য। খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন তহসিলদার ও ওসিকে নিয়মিত মামলা রুজু করার জন্য বলা হয়েছে।
নাটোর-৪ আসনের এমপি ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে সবসময়ই আমার নির্দেশনা রয়েছে। অবৈধ পুকুর খনন করে যারা মাটি ব্যবসা করছে তাদের স্থান আমার কাছে নেই। আপনারা প্রচার ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, যারা আইন ভঙ্গ করে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টিএইচ