দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা ঘোড়াঘাট। সেখানে থাকা একটি মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সেবা নেন ৭ থেকে ৮ শতাধিক উপজেলার নাগরিক। ৩১ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার ভবন নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। তবে সেই ভবনের অনুমোদন মিলেছে গত বছরে।
নবনির্মিত ভবনের কার্যক্রম চালু হলেও ৫০ শয্যার জনবল নিয়োগ হতে সময় লাগতে পারে আরও ৪-৫ বছর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই জনবল নিয়োগের অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালটিতে মিলবে না ৫০ শয্যার আধুনিক চিকিৎসাসেবা। বাধ্য হয়েই ৫০ শয্যার হাসপাতালে দিতে হচ্ছে ৩১ শয্যার সেবা। তবে সেই ৩১ শয্যার সেবাও পাওয়াও যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে শত শত রোগীর কাছে। বিভিন্ন পদে ৩৮ জন জনবল শূন্য থাকায় কাঙ্ক্ষিত অনেক সেবাই দিতে হোঁচট খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিতে জানা যায়, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৩১ শয্যার সেবা প্রদান কার্যক্রমে হাসপাতালটির বিভিন্ন পদে জনবল থাকার কথা ১২২ জন। তবে বর্তমানে জনবল আছে ৮৪ জন। এদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদ ফাঁকা রয়েছে ৫টি। বাকি ৩৩টি শূন্য পদ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের।
হাসপাতালের তথ্য বলছে প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে সেবা নেন ৬৫০ থেকে ৭০০ জন, আন্তঃবিভাগে সেবা নেন ৫০ থেকে ৫৫ জন এবং ল্যাবে সেবা নেন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনবল সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ৩১ শয্যার পুরাতন ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও দুর্ঘটনায় আহত ৫ জন রোগী এবং তাদের স্বজনরা সেখানে ভিড় করে আছেন। দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক এবং অন্য স্টাফরা তাদের পর্যায়ক্রমে সেবা প্রদান করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তার দেয়া তথ্য বলছে, হাসপাতালটিতে প্রথম শ্রেণির আবাসিক মেডিকেল অফিসারের ১টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সহকারী সার্জনের ৩টি ও সিনিয়র স্টাফ নার্সের ১টি পদ শূন্য রয়েছে। অপরদিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট্র (এসআই) পদে একজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে একজন, স্টোর কিপার পদে একজন, ওয়ার্ড বয় পদে তিনজন, আয়া পদে দুজন এবং কুক পদে ২ জন থাকার কথা। তবে এসব পদে জনবল সংখ্যা শূন্য।
এছাড়াও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৪টি, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৩টি, স্বাস্থ্য সহকারীর ৫টি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ২টি, নিরাপত্তা কর্মীর ১টি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ৪টি এবং অফিস সহায়কের ৪টি পদ শূন্য পড়ে আছে। এই সবগুলো শূন্য পদ ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীর।
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় আমাদের হাসপাতালের সেবার মান অনেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। তবে কম সংখ্যাক জনবল নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম বলেন, আমাদের একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলমান আছে। ঈদের পরই সেটির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে। পুরো জেলায় ১৪৩টি শূন্য পদ রয়েছে। অনেকে আবার পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছে। পদোন্নতি হলে দিনাজপুর জেলায় সর্বোমোট ৪০৭টি পদ শূন্য হবে। আমরা একটি নীতিগত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। আশা করছি শিগগিরই শূন্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে।
টিএইচ