দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় প্রথমবারের মত স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে হিজরা সমপ্রদায়ের ৫ জনকে দেয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। সেখানে গড়ে উঠেছে হিজরা পল্লী। উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের কশিগাড়ী গ্রামে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ধারঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই পল্লী।
সেখানে ঘর পেয়েছে শিলা, কাজলী, আমজাদ, সজনী ও জোসনা। তারা সবাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ঘরের পাশাপাশি সরকারি বা বেসরকারিভাবে তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেলে স্বস্থি ফিরবে তাদের সকলের মধ্যে, এমনটাই দাবি তাদের।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের ৫ জনকে দেয়া হয়েছে ঘর। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। গতবছর অক্টোবর মাসে তাদেরকে সরকারি এই ঘর হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন।
তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার কারণে জন্মের পর থেকেই বাবা-মা, পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এসব মানুষ। মাথা গোঁজবার নির্দিষ্ট কোন ঠাঁই ছিল না তাদের। শান্তিতে এক পলক ঘুমাতে মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকত তারা। তবে ভাড়া বাড়িতেও দীর্ঘদিন থাকবার সুযোগ হতো না। নানা অজুহাতে বাড়ি থেকে বের করে দিত ভাড়া বাড়ির মালিক।
সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে সমাজের অবহেলিত ছিন্নমূল এসব মানুষ হয়েছে জমির মালিক। পেয়েছে নিজস্ব বাড়ি। নতুন বাড়িতে তারা শুরু করেছে বাঁচার লড়াই, বুনছেন নিজের স্বপ্ন। নিজ বাড়িতে তারা দেশি-বিদেশী নানা জাতের কবুতর, হাঁস-মুরগী পালন করছে। বাড়ির উঠোনে চাষ করছে শাকসবজি ও ফলমূল। তারা সবাই হতে চায় আত্মনির্ভরশীল।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে সেই তারা এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায় নিজের স্বপ্নের বাড়িতে। সময় কাটে পশুপাখি ও হাঁসমুরগি পালন করে। পেটের খোরাক জোগাতে এখন তাদের ভরসা বিয়ে, আকিকা, অন্নপ্রাশন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাড়ি। এসব বাড়িতে নাচগান করে বিনোদন দেয় তারা। বিনিময় খুশি করে অনেকে টাকা উপহার দেন। তা দিয়ে কষ্টে চলছে তাদের জীবন।
তৃতীয় লিঙ্গের কাজলী বলেন, ‘এক সময় বাড়ি ভাড়া নেয়ার জন্য ঘুরে বেড়াতাম। মানুষজন আমাদেরকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিত। আজ আমরা নিজস্ব জায়গায় ঘুমাতে পারছি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবার ভাষা আমাদের জানা নেই।’
৩নং সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আগামীতে সরকারের সহযোগীতায় তাদের কর্মসংস্থান এবং জীবনমান উন্নয়নে সবধরণের সাহায্য সহযোগীতা করা হবে।’
এদিকে ঘোড়াঘাট ইউএনও রাফিউল আলম জানান, ‘তৃতীয় লিঙ্গের ৫ জনকে নিয়ে এই উপজেলায় প্রথমবারের মত হিজরা পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। এতে সমাজে স্বস্থি ফিরেছে। পর্যায়ক্রমে এই উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের সবাইকে সুশৃঙ্খল পল্লীতে বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে।’
টিএইচ