দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দুটি পৌরসভার ৮টি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে পূর্ব পাহাড়ের পাদদেশে ধোপাছড়ি, চিড়িংঘাটা, হাশিমপুর, জামিরজুরী, হাফছড়িকুল, হাতিয়াখোলা, লালুটিয়া, কাজী ফার্ম ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার বাজালিয়া, পুরানগড়, শিলঘাটায় গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে খ্যাত লিচু অন্য বছরের তুলনায় এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে।
এবছর উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাল দাম পেয়ে খুশি এখানকার শত শত লিচু চাষিরা। পাশাপাশি আম কাঁঠাল, আনারস, বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে মৌসুমী ফলের সমারোহে চাষী, ব্যবসায়ী, ফঁড়িয়া ও আড়তদারদের মধ্যে ক্রয় বিক্রয়ে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চন্দনাইশ পূর্ব পাহাড়ে লিচু বাগানের মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ী ফঁড়িয়া আড়তদাররা বাগান থেকে লিচু ক্রয় করছে। এসব লিচু বিভিন্ন জায়গায় হাত বদল হয়ে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে যায়।
চন্দনাইশের আরকান সড়ক সংলগ্ন দোহাজারী হাজারী বাজার, রেলওয়ে স্টেশন, ধোপাছড়ি বাজার, হাশিমপুর বাদামতল, গাছবাড়ীয়া খানহাট, কাঞ্চনাবাদ, চন্দনাইশ উপজেলা সদর বাজার, বরকল, বরমার বেশির ভাগ লিচু বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া কেরানীহাট, বাজালিয়া, পুরানগড়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিকিকিনি চলে। বেশিরভাগ লিচু বাগান সাতকানিয়ায় বাজালিয়া, পুরানগড় ও চন্দনাইশের ধোপাছড়ি, দোহাজারী লালুটিয়া কাজী ফার্ম। তাছাড়া এসব এলাকায় বাড়ির আঙ্গিনায় বসতভিটায় গাছে গাছে, থোকায় থোকায়, লাল টুকটুকে রঙের লিচু সবার নজর কাড়ছে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি ১শ লিচু বিক্রি হয় ১৩০ টাকা থেকে শুরু করে রসালো ও ভালো মানেরগুলো ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে। বেশিরভাগ বাজারে লিচু কদর রয়েছে বাঁশখালী কালিপুর, রাজশাহী ও দিনাজপুরের স্বাদযুক্ত লিচু।
দোহাজারী কাজী ফার্মের লিচু বর্গাচাষা জহির ও মো. জয়নালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্পূর্ণ ফরমালিন ছাড়া সরাসরি আমরা লিচু বাগান থেকে ব্যবসায়ীদের কাছে এক হাজার লিচু ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করি। এখান থেকে এরা নিয়ে গিয়ে প্রতি ১৫০ টাকা করে লাভ করে।
দোহাজারী হাজারী বাজারে লিচু কিনতে আসা শাপলা নামের এক মহিলাকে স্বাদ আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বাঁশখালী ও কালীপুরের মতো মিষ্টি এখানকার উৎপাদিত লিচু। এখানকার লিচু বীজ বড় হলেও কালিপুরের লিচুর বীজ ছোট তাই খেতে স্বাদ ও সুগন্ধীযুক্ত।
চন্দনাইশের হাশিপুরের লিচু ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর গাছের মুকুল আসার আগেই ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা অনেক লিচু বাগান কিনে নেন। পাইকাররা এখান থেকে লিচু কিনে চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার হাটে বাজারে বিক্রি করে থাকে।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলার কৃষি অফিসার সৈকত বডুয়া সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই উপজেলার পাহাড়ের এক হাজার একর জায়গায় লিচু বাগান রয়েছে। লিচুর মুকুল আসতে বৃষ্টি হলে ফলন আরো ভালো হতো। আগামীতে লিচু চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মাঠকর্মীরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। দুই উপজেলার দেড় শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে।
টিএইচ