এবারের ঈদের দীর্ঘ ছুটিকে কাজে লাগিয়ে অনেক প্রকৃতিপ্রেমী এখন চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে। প্রকৃতির লীলাভূমি এ জেলায় অবকাশের সেই সময়টুকু আনন্দময় করে তোলার জন্য রয়েছে নানান দর্শনীয় স্থান। যেখানে প্রাণ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের কাছাকাছি থেকে এবারের ছুটি উপভোগ করছেন তারা।
ঈদের চতুর্থ দিন গত বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগান ও পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি পর্যটন এলাকার চায়ের দোকান, ছোট বড় রেস্টুরেন্টে ভিড় দেখা গেছে।
এছাড়াও বধ্যভূমি ৭১, চা কন্যার ভাস্কর্য, ভাড়াউড়া চা বাগান, বিটিআরআই রাধানগর, মনিপুরী পাড়ায় পর্যটকরা ভিড় করেছেন। শ্রীমঙ্গল শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িতে দেখা যাচ্ছে পর্যটকদের। তাছাড়া চাঁদের গাড়িখ্যাত জীপগাড়িগুলো নিয়ে পর্যটকদের উল্লাস করতেও দেখা গেছে।
এদিকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যমতে, গত তিনদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪ হাজার ৫৩৩ জন পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৫ লাখ ১২ হাজার ৯৫ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়।
জানা গেছে, পুরো জেলায় শতাধিক পর্যটন স্পট থাকলেও দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা। এই জনপদ যেকোনো ভ্রমণপিপাসুদের মন ও দৃষ্টি কড়ে নেবে প্রকৃতির অপর মহিমায়। পাশাপাশি মণিপুরি, খাসিয়া, গারোসহ শত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস এ জেলাকে করেছে সমৃদ্ধ। তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য সবাইকে আকর্ষণ করে, বিশেষ করে মণিপুরি শাড়িসহ তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো নজরকারে এখানে আসা পর্যটকদের।
শ্রীমঙ্গলে ঘুড়তে আসা সামিয়া রহমান নামের একজন পর্যটক বলেন, চা বাগানে এসে ছবি তুললাম। এই প্রথম চা বাগানে আসা। যেদিকে যাচ্ছি ভালো লাগছে। এখানে এসে ভালো সময় কাটল।
ঢাকা থেকে পরিবারসহ বেড়াতে আসা তানহা চৌধুরী নিপা বলেন, চা বাগান আমার খুব ভালো লাগে। চারদিকে সবুজের সমারোহ, চা বাগানের মাঝে হাঁটা সব মিলিয়ে অসাধারণ অনুভূতি। কাঁচা চা পাতার ঘ্রাণ সত্যিই দারুণ।
পারভেজ ও জাহেদ নামের আরও দুজন পর্যটক বলেন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আনারস খাচ্ছি, চা বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। অনেক কিছু দেখার আছে শ্রীমঙ্গলে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, পর্যটকদের উপস্থিতি ভালো। ঈদের ২, ৩ ও ৪ তারিখে প্রায় সব রিসোর্টই হাউসফুল ছিল। ঈদের সময়ে পর্যটন ব্যবসা কখনোই খারাপ যায় না। এটা আমাদের পর্যটন খাতের জন্য ইতিবাচক দিক।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, এ ঈদের অন্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সবময়েই বেশি হয়ে থাকে।
তিনি জানান, গত তিনদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪ হাজার ৫৩৩ জন পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৫ লাখ ১২ হাজার ৯৫ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এবার ঈদের ছুটি বেশ লম্বা থাকায় প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে।
আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি রাখছি। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাঘুরি করে সুন্দরভাবেই বাড়ি ফিরতে পারেন আমরা সেভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি।
টিএইচ