বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post
কাঁচামালের মূল্য চড়া লোকসানে তাঁতীরা

চৌগাছায় বন্ধের পথে ৯৫ শতাংশ তাঁত

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

চৌগাছায় বন্ধের পথে ৯৫ শতাংশ তাঁত

কাঁচামালের মূল্য চড়া হওয়ায় যশোরের চৌগাছায় বন্ধের পথে ৯৯ শতাংশ তাঁত। দেশের তাঁত শিল্পের বড় একটি অংশ চৌগাছা উপজেলায় রং, সুতা, কেমিক্যালসহ তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁতশিল্পে ব্যাপক ধস নেমেছে। কমে গেছে এ অঞ্চলের কাপড়ের হাটের পাইকারি বাজারে তাঁতবস্ত্রের বেচা-বিক্রি। ফলে তাঁতিরা পুঁজি সংকটে পড়ায় উপজেলায় শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ তাঁত বন্ধের পথে। এতে বিপাকে পড়েছেন তাঁত শ্রমিকরা।

স্থানীয় তাঁত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বাজার মন্দা রোধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তাঁত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার সরকারি ব্যবস্থা না থাকায় তাঁত শ্রমিকেরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

ফলে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে প্রায়। তাঁতিরা জানান, উপজেলার হাজরাখানা, টেঙ্গুরপুর, দেবালয়, চাঁদপাড়া, গুয়াতলী, পুড়াহুদা, ধুলিয়ানি, শাহাজাদপুরসহ পৌর শহরের পূর্ব কারিগরপাড়া ও পশ্চিম কারিগরপাড়া উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা  তাঁতশিল্পের উপর নির্ভরশীল। তাঁতবস্ত্রের বাজার পড়ে যাওয়ায় চরম অর্থনৈতিক মন্দাভাব চলছে এসব এলাকায়।

অন্যদিকে, উপজেলার চৌগাছা ও পুড়াপাড়া, পাশাপোল, ধুলীয়ানী ও সলুয়া কাপড়ের হাট থেকেই শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের বেশকিছু এলাকায় তাঁতের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও থ্রি-পিস রপ্তানি হয়ে থাকে। সে রপ্তানিও বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে তাঁত ব্যবসায় চরম ধস নেমে এসেছে। এতে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র তাঁত মালিক তাঁত ব্যবসায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। 

ফলে একদিকেবন্ধ হচ্ছে তাঁত। অন্যদিকে তাঁত শ্রমিকেরা ন্যায্য মঞ্জুরি না পেয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সরেজমিনে উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে সবাই তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন। জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে গেছে বেশির ভাগ মানুষ। 

এ সময় টেঙাগুরপুর গ্রামের প্রবীণ তাঁত আজিজুর রহমান বিশে, বলেন, রং, সুতা, কেমিক্যালের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৃষ্টি-বন্যাসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বৃদ্ধি, ন্যায্য মঞ্জুরি থেকে বঞ্চিত, ঋণের কিস্তির ঘানি টানাসহ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ উপজেলার তাঁত শ্রমিকেরা। 

থ্রি-পিসের বহুল ব্যবহারের কারণে তাঁতের শাড়ির ব্যবহার বহুলাংশে কমে গেছে। ইতোমধ্যে পুঁজি সংকটে এ এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়া হাজার-হাজার শ্রমিক বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থার মধ্যদিয়েও কিছু সংখ্যক শ্রমিক যারা তাঁতের কাজ করেছেন, তাদের গড় আয় ৩০০/৪০০ টাকা হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন। এমন পরিস্থিতি নিরসনে তারা দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

চৌগাছা বাজারের কাপুড়িয়া পট্টির কাপড় ব্যবসায়ী তাঁতি আমিরুল ইসলাম বলেন, রং, সুতা কেমিক্যালের মূল্য বৃদ্ধিতে ও পুঁজি সংকটে পড়ে এ এলাকার বহু তাঁতের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি দুর্গাপূজা উপলক্ষে বর্তমানে কিছু তাঁতবস্ত্র বিক্রি হলেও তা পরিমাণে কম হওয়ায় তাঁতিরা মহাবিপাকে পড়েছেন। যারা ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন, তারা সেই ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে এ উপজেলার তাঁত শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

টিএইচ