শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

চৌহালীর যমুনায় ‘বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও’

চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি 

চৌহালীর যমুনায় ‘বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও’

ভাঙন কবলিত সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা চালিয়ে যমুনা নদীর বিশাল ক্যানেল অতিক্রম করে শিক্ষালয়ে যাতায়াত করে। প্রতিটি নৌকায় ৩০-৪০ জন করে শিক্ষার্থী উঠতে হয় দল বেঁধে।

আর নৌকায় মাঝি-মাল্লা হিসেবে বৈঠা হাতেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষালয়ে যায়। দুর্গম চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের পয়লা, দত্তকান্দি এলাকায় যমুনার শাখা নদীর পাশে প্রতিষ্ঠিত দওকান্দি স.প্রাবি, পাচুরিয়া স.প্রাবি, বিলজলহাট স.প্রাবি, দত্তকান্দি দাখিল মাদ্রাসা ও আরমাশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনার ভাঙনে বিপর্যস্ত।

এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থীর ক্যানেল পারাপার হয়ে যাতায়াতে নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা। বর্ষার সময় নৌকা উল্টে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিনিয়তই থাকে প্রাণহানির আশঙ্কা। এসব উপেক্ষা করেই যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের আলো সঞ্চয় করে যাচ্ছে যমুনা চরের এসব শিশু।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের প্রায় সাড়ে ৪-৫ মাসই বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। কখনো কখনো ঢেউয়ের কারণে নৌকা উল্টে যাওয়ার শঙ্কার সঙ্গে জীবন হারানোর ভয় তো আছেই। তবু ঝুঁকি নিয়েই তারা পৌঁছে শিক্ষাঙ্গনে।

এ বিষয়ে দত্তকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রথম প্রস্তুতি নৌকা আর বৈঠার খোঁজ। এরপর স্কুলের নির্ধারিত পোশাক পরে বই-খাতা নিয়ে নৌকায় ভেসে বিদ্যালয়ে যাই। মাঝি পাই না অনেক সময়, এ জন্য বহুদিন ক্লাস ধরতে পারিনি।

তাই এখন বাধ্য হয়ে নিজেরাই নৌকা চালান শিখেছি। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নৌকায় চড়ে আর শুকনো মৌসুমে হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করি। স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক জানান, উপজেলার উমারপুর ইউপির যমুনার পূর্বপারসহ উপজেলার প্রায় ৪০টি বিদ্যালয়ে যাতায়াতে কয়েক যুগ থেকেই এ দুরবস্থা। বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়।

তবে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে একটি বড় নৌকার ব্যবস্থা করলে বর্ষার শুরু থেকে পানি শুকানো পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুবিধা হবে। এদিকে শীতকালে খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। তখন পড়তে হয় ভিন্ন সমস্যায়। এ সময় কোনো বাহনই চলে না। তখন শিক্ষার্থীদের হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় শিক্ষালয়ে।

এ জন্য নির্ণয় করে দেয়া হয় স্কুলের সময়সূচি। এ বিষয়ে পয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানান, যমুনা নদী ভাঙনের কারণে চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট নেই বললেই চলে। বর্ষা মৌসুমে সমগ্র চরাঞ্চল ডুবে থাকে। যমুনা নদী থেকে বর্ষার পানি কমলেও খাল-বিল ও শাখা নদীতে পানি না কমায় বছরের অধিকাংশ সময় নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় থাকে না। চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান মিয়া জানান, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসার চিত্র দেখেছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে।

চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মণ্ডল জানান, এখানে একটি কথা প্রচলন আছে ‘বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও (পা)’। বন্যার পানি কমে গেলেও যমুনার চরাঞ্চলে খালে পানি রয়েছে। বছরের সাড়ে ৫ মাস শিক্ষার্থীসহ সবাইকে নৌকায় পারাপার হতে হয়। তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য সরকারিভাবে একটি বড় নৌকা সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। 

টিএইচ