জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জান্নাত কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় ফেনী জেলা ছাত্রলীগের ২০ নেতাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সাঈদীর জন্য জান্নাত কামনা করে মসজিদে দোয়া করায় এক খতিবকে মেহরাব থেকে টেনে মসজিদের বাইরে নিয়ে মারধর করেছে সরকার দলীয়রা। গত শনিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু ও সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ নেতাদের অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ বলেন, সমপ্রতি নীতি, আদর্শ এবং সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া অসামপ্রদায়িক চেতনা বহনকারী একটি সংগঠন হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগে নীতি-আদর্শ ভুলে, নৈতিক অবক্ষয় হওয়া কারই স্থান নেই।
এদিকে জুমার নামাজ শেষে সাঈদীর জান্নাত কামনা করে দোয়া চাওয়ায় ছাত্রলীগ নেতার হাতে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন জেলার একটি মসজিদের খতিব ও ইমাম মাওলানা মো. সলিমুল্লাহ। গত শুক্রবার ফেনী সদর উপজেলার ফকিরহাট বাজার মাদরাসা জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর শত শত মুসল্লির সামনে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। পরে মসজিদের খতিব পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানান নির্যাতিত মাওলানা মো. সলিমুল্লাহ।
ফকিরহাট বাজার মাদরাসা জামে মসজিদের মুসল্লি আবদুল ওহাব জানান, জুমার নামাজ শেষে খতিব মাওলানা মো. সলিমুল্লাহ মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সাঈদীর জন্য জান্নাত কামনা করে দোয়া করতে বলেন।
এ সময় মসজিদে উপস্থিত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর শুক্কুর মানিকের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক ইমামকে থামিয়ে মেহরাব থেকে টেনে মসজিদের বাইরে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাকে মারধর করা হয়। ঘটনার পর এ নিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, ইমাম সাহেব একজন দেশদ্রোহীর জন্য দোয়া করায় উপস্থিত মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে উদ্ভূত ঘটনার জন্য তিনি সকলের কাছে মাফ চাইলে তাকে রেহাই দেয়া হয়। এসময় তাকে মসজিদের খতিব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এদিকে খতিবকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর শুক্কুর মানিক বলেন, জুমার নামাজ শেষে বিতর্কিত একজন ব্যক্তির জন্য দোয়া চাইলে মুসল্লিরা ক্ষেপে যান। তখন আমি তাকে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেছি। সেসময় মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি।
সাঈদীসহ অন্য আলেমদের জন্য দোয়া চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মাওলানা মো. সলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি, তিনিই ন্যায় বিচার করবেন। আমার আর কিছু বলার নেই।
ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর শুক্কুর মানিকের বড় ভাই স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ও মসজিদ কমিটির সভাপতি শেখ ফরিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ ব্যাপারে শুক্রবার রাত পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
টিএইচ