টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ জনবলের অভাবে পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্যসেবা চালু হচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও ফলপ্রসূ হয়নি।
ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশালকায় ভবন একপ্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। টাঙ্গাইলের ৪০ লাখ মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পাশে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ১৫ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৮ সালের শেষদিকে ভবন নির্মাণ শেষ হয়। ২০২২ সালের ২২ মার্চ হাসপাতাল ভবন কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেয় গণপূর্ত বিভাগ।
সূত্রমতে, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেডিসিন বিভাগ চালু করা হয়। এছাড়া শিশু, ডায়রিয়া, কার্ডিওলজি, অবস (গাইনি), চক্ষু, নাক, কান, গলা, পোস্ট অপারেটিভ, আইসিইউ, সিসিইউ, সার্জারি, অনকোলজি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ড চালুর প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২১ জুন থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে মেডিসিন, শিশু, গাইনি, সার্জারি, চক্ষু, ডেন্টাল, বক্ষব্যাধি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, মানসিক, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, ফিজিক্যাল মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, নেফরোলজি, অর্থোপেডিক, অনকোলজি (ক্যানসার) সেবা চালু রয়েছে। গত বছরের শুরু থেকে আরট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, সিটিস্ক্যান, এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ১০টি আইসিইউ বেড, সিসিইউ ও ১৫টি অপারেশন থিয়েটার চালু করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জনবল সংকটে হাসপাতালে পুরোপুরি স্বাস্থ্যসেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ৬৫ জন ডাক্তার প্রয়োজন। সেখানে রয়েছেন ৬১ জন। তারা নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন না। অনেকে ঢাকা থেকে এসে অফিস করেন। ১৬৫ জন নার্সের মধ্যে মাত্র ৩৯ জন রয়েছেন।
তাদের মধ্যে চারজন প্রশিক্ষণে ও দুজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং দুজন ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছেন। ৩৭৭ জন আউটসোর্সিং জনবলের মধ্যে ৯০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আয়া, সুইপার ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা রোগীদের পাশেই রাখা হচ্ছে। দুর্গন্ধে শৌচাগারে প্রবেশ করা যায় না।
স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নামে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হলেও পুরোপুরি চিকিৎসা দেয়া শুরু না হওয়ায় টাঙ্গাইলের ৪০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রোগীদের ঢাকাসহ আশেপাশের বিভাগীয় শহর থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিতে হচ্ছে। ফলে আশঙ্কাজনক রোগী ও স্বজনরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পুরোপুরি মানসম্মত চিকিৎসাসেবা চালু করার দাবি জানান।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আলী খান জানান, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি চালু করতে পর্যাপ্ত জনবলের প্রয়োজন। জনবলের জন্য মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। জনবল পেলেই পুরোপুরি স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হবে।
টিএইচ