মাগুরায় বিগত সরকারের সময়ে দুটি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এম বাবলু নামে এক আ.লীগ কর্মীকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে জেলা বিএনপি। পরিচয় গোপন করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সুপারিশ পেতে তাকে বিএনপি পরিচয়ে মামলার তথ্য ঢাকায় পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ওই আ.লীগ কর্মীর নামে দায়েরকৃত হত্যা মামলা দুটির জিআর নম্বর মাগুরায় রাজনৈতিক হয়রানির শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের অনুকূলে সুপারিশের জন্যে প্রস্তুতকৃত মামলা তালিকায় জুড়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আর এ ঘটনায় মাগুরা জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী নেতা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
মাগুরা-১ আসনের সাবেক আ.লীগ এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আ.লীগ কর্মী বাবলু মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে।
২০১৬ ও ২০১৮ সালে গ্রামীণ দাঙ্গায় খলিল ও জাহাঙ্গীর নামে দুই ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় বাবলুকে প্রধান আসামি করে দুটি হত্যা মামলা হয়। অথচ আ.লীগ এমপির সঙ্গে সখ্য থাকায় বিগত বছরগুলোতে তিনি পার পেয়ে যান, কিন্তু ৫ আগস্ট আ.লীগ সরকারের পতনের ফলে বিপাকে পড়ে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে নিজের নামটি বিএনপির তালিকায় যুক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন বলে প্রচার রয়েছে।
মাগুরা বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, বিগত সরকারের আমলে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের দমন পীড়নে অসংখ্য ভুয়া মামলা তৈরি করা হয়। এসব মামলার মধ্য থেকে গুরুত্ব বিবেচনায় ৫৪টি মামলা বাতিলের জন্যে তালিকা প্রস্তুত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভির দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। যেখানে মাগুরা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক আলি আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই তালিকার সর্বশেষ দুটি ক্রমিকে আ.লীগ নেতা বাবলুর নামে দায়েরকৃত হত্যা মামলা দুটির জিআর নম্বর জুড়ে দেয়া হয়েছে।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সোহেল মুন্সী বলেন, বাবলু অতীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন; কিন্তু ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শিখরের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তিনি আ.লীগে যোগদান করেন।
তারপর গত ৬ বছরে সে আ.লীগের কর্মীদের সঙ্গে মিশে আমাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা বাড়ি ঘরে ঘুমাতে পারিনি। এখন আবার ভোল পালটাতে বিএনপি নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছে। নেতারাও সেই সন্ত্রাসীকে বিএনপি সাজিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রেজাউল করিম বলেন, মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দুটি হত্যা মামলার আসামি আ.লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে বাঁচাতে বিএনপি সাজিয়ে কেন্দ্রে সুপারিশের জন্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা এই অপকর্মে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
তবে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক সাক্ষাৎকারে ‘আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে হত্যা মামলার আসামিকে বিএনপি দেখিয়ে সুপারিশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ অস্বীকার করে মাগুরা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক আলী আহমেদ বলেন, আমাদের আইনজীবীরা তালিকা তৈরির সময় ভুল করে তার নাম দিয়ে ফেলেছে।
এটি সংশোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া সে ছাত্রদল ও যুবদলের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সঙ্গে জড়িত ছিল। সে আমাদের সঙ্গেই দল করেছে এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে একাধিক মামলার ঘটনায় তাকে সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখর তার বাসভবনের পাশে নিয়ে প্রকাশ্যে জবাই করার হুমকি ধামকির ভয়ে সে সাময়িক দল থেকে দূরে ছিল।
গত চার এবং পাঁচ তারিখে মাগুরার ভায়না মেড়ের আন্দোলন সংগ্রামে মাগুরার নেতা কর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিলেন এবং সে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে।
টিএইচ