মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়ন-বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহমান পদ্মার শাখা নদী। এ নদীতে সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নৌপথে ট্রলারই যাতায়াতে প্রধান মাধ্যম। এতে করে ঝড়-তুফান ও রাত-বিরাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষকে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর ও রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটি। নদীর পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল বানারি ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ১২-১৩টি গ্রাম, জেলা সদরের শিলই ও বাংলাবাজার তিন-চারটি গ্রাম, শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুন্ডের চর এবং কোরবি মনিরাবাদসহ পাঁচটি ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রাম। এছাড়া কুমিল্লা জেলার এলামচর, পূর্ব বানিয়াল, চাঁদপুরে হাইমচরের কিছু অংশ মুন্সীগঞ্জ জেলার সঙ্গে সংযুক্ত।
এসব ইউনিয়নের গ্রামগুলোর অন্তত দুই লাখ মানুষ তাদের প্রয়োজনে প্রতিদিনই ট্রলারে করে এ নদী পারাপার হচ্ছে। নদী পারাপার হয়ে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ সদর, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করেন। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দিঘিরপাড়ে পদ্মার শাখা নদীতে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখো মানুষ।
উপজেলার দিঘিরপাড় বাজার ও দিঘিরপাড় চরের সঙ্গে একটি সেতু নির্মাণ হলে জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বাসিন্দাদের পাশাপাশি উপকৃত হবে পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর, কুমিল্লা ও শরীয়তপুর জেলার সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। কিন্তু সেতু না থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পদ্মার শাখা নদী পারাপারে এখন ট্রলারই একমাত্র ভরসা। ট্রলারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
দিঘিরপাড় বাজারে গেলে চোখে পড়ে পদ্মার শাখা নদীর পূর্বপাড় থেকে ট্রলারভর্তি মানুষ আসছেন। ট্রলার থেকে নেমে দিঘিরপাড় বাজার, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ শহর ও রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন লাখো মানুষ। একইভাবে এখান থেকে ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণপাড় যাচ্ছেন।
এছাড়াও নদীর উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ থেকে ট্রলার ভর্তি করে দিঘীরপাড় হাটে কেউ মালপত্র বিক্রি করতে আসছেন, কেউবা এ হাট থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আলম শিকদার বলেন, আমরা শরীয়তপুরের মানুষ হলেও আমাদের সব কাজের জন্য মুন্সীগঞ্জেই সুবিধা বেশি। আমাদের হাটবাজার করতে হয় দিঘিরপাড় বাজারে। ঢাকায় যাই এ পথ দিয়ে। বেশি রাত হলে ট্রলার পাওয়া যায় না। ট্রলার পেলেও ৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়।
নদীপথে সময় লাগে বেশি। স্থায়ী বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী নয়ন হালদার বলেন, দিঘিরপাড় খেয়াঘাট থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। নদীর পশ্চিমপাড়ে সড়কের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। যাত্রীবাহী কোনও যানবাহন চলে না। এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে দিঘীরপাড়ে আসা-যাওয়া করতে মোটরসাইকেলে ২০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। সেতু না থাকায় ঘাটে এসে ট্রলারের জন্য প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট বসে থাকতে হয়।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা প্রকৗশলী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, দিঘিরপাড় বাজার পদ্মার শাখা নদীর ওপর ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে ৪ কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিক কাজ মাটি পরীক্ষা ও অন্য সার্ভে সম্পন্ন করেছে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল। এখন নকশা করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
টিএইচ