এশিয়ার বৃহত্তম সারকারখানা নরসিংদীর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প উদ্বোধন করলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১২ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বেলা ১২ টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সারকারখানাটি উদ্বোধন করেন।
আজ দুপুরের পর নরসিংদী মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিবেন। জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন।
নরসিংদী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পুরো শহর। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
সারকারখানা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি সুলভ মূল্যে কৃষকদের কাছে সার পৌঁছে দিতে ২০১৮ সাল এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে শিল্প মন্ত্রণালয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন।
পরিবেশবান্ধব এ কারখানাটিতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন হিসেবে ১০ লাখ ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে, যা দেশে সার উৎপাদনে এক নব দিগন্ত সূচনা হবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আর ১ টন সার উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ ২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস খরচ হবে।হিসেব অনুযায়ী প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদনের জন্য তিতাস গ্যাসকে প্রায় ৭০ হাজার এমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
চার বছর মেয়াদী এ জিপি প্রজেক্টের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর নরসিংদীর পলাশে প্রতিষ্ঠিত দুটি সরকারখানায় উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় স্যারের চাহিদা পূরণের দুটি সরকারখানাকে ভেঙ্গে একটি অত্যাধুনিক কারখানা করার পরিকল্পনা করে সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের মার্চে শুরু হয় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় জাপান ও চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর দিনরাত পরিশ্রম করে নির্ধারিত সময়ের দুমাস আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে গত ১৪ অক্টোবর পরীক্ষামূলক সার উপাদান শুরু করে কারখানাটি।
কারখানাটি চালুর পর দেশের কৃষি উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘোড়াশাল পলাশ সার কারখানা প্রকল্পের পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক জানান, আমরা করোনার মধ্যেও কাজ করেছি। তাই প্রকল্প কাজের নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই শেষ করে অক্টোবরে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন করতে পেরেছি। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১০ মার্চ। শেষ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, সার কারখানাটি নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশি এবং বিদেশি মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করেছে। বর্তমানে সরকারকে ইউরিয়া সার আমদানিতে প্রতিবছর ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। এই ঘোড়াশাল-পলাশ সারকারখানাটি উৎপাদনে এলে আর তা দিতে হবে না।
কিন্তু বাংলাদেশে বছরে ২৫ লাখ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হলেও এটি উৎপাদনে এলে ৫ লাখ টন পাওয়া যাবে। আর বাকি ৫ লাখ টন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে।
টিএইচ