বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

দখল ও কারখানার বর্জ্যে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

দখল ও কারখানার বর্জ্যে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ। এ নদের দুই তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা মিল কারখানাগুলোর বর্জ্যের পানিতে ধ্বংস হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদী। এতে তিন উপজেলার কৃষককূলসহ সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়াসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদী থেকে শুরু হয়েছে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদটি। এটি রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ছয় কিমি প্রবাহিত হয়ে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ দিয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে। সরু এ নদ দিয়ে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ বিভক্ত। 

এটি আড়াইহাজার উপজেলার পশ্চিম পাশের প্রায় অর্ধশত গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি আড়াইহাজার উপজেলার রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের ওপরে বালিয়াপাড়া ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উত্তর দিক থেকে আসা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি একবারে কালো। 

সমানতালে নদীতে পড়ছে মিল কারখানা ও ডাইং কারখানার বর্জ্যের পানি। বিষাক্ত হয়ে পড়ার কারণে নদের পানি ব্যবহার করে না এলাকাবাসী। ২০-২২ বছর আগেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দিয়ে হাজার হাজার একর জমিতে বোরো ধানের চাষসহ গৃহস্থালির সব কাজই করতেন কৃষকরা। 

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে হরগাঁও এলাকায়  সুমন, সাইফুল, রাজু ও জুয়েলসহ ১৬টি ডাইং কারখানার বর্জ্যে নদের পানি দূষিত হচ্ছে। তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ক্ষমতা বলে কারখানাগুলো চালিয়ে আসছে।

এ ছাড়াও সুমন সাইফুল ও কাদিরের মোবেল কারখানার পোড়া মবেলের দুর্গন্ধে এলাকার মানুষের বসোবাস অনোপযোগী হয়ে পড়ছে। বালিয়া পাড়া ব্রিজ এলাকায় প্রায় ১৬টি ডাইং কারখানার পানি ব্রহ্মপুত্র নদীতে পড়তে দেখা যায়। 

আড়াইহাজার দুবতারা কালীবাড়ি ও গিরদা এলাকায় ১২/১৪টি ডাইং কারখানা গড়ে তুলেছে। সোনারগাঁ উপজেলা ও নরসিংদী সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ে গড়ে উঠা ডাইং কারখানার বর্জ্যেও এই নদের পানি দূষিত হচ্ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ দূষিত পানি সোনারগাঁ উপজেলা দিয়ে মেঘনায় মিশে যাচ্ছে।

রূপগঞ্জ উপজেলার হরগাঁও এলাকার জুয়েল মিয়া বলেন, একসময় আমরা এই নদীর পানিতে গোসল করতাম, নদীতে প্রচুর মাছও ছিল এখন বর্জ্যের পানিতে সব শেষ হয়ে গেছে এখন আর মাছও নাই গোসল করার সুযোগও নাই। 

ব্রহ্মপুত্রের এই অবনতির পিছনে একমাত্র ডাইং কারখানার মালিকরাই দায়ী। আড়াইহাজারের কদমতলী গ্রামের হারেছ মিয়া বলেন, ‘কারখানার পানিতে নদীর পানি দূষিত হইয়া গেছে। ২০ বছর ধইরা পানি দূষিত হচ্ছে। নদীতে একসময় দেশি অনেক রকমের মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন পাওয়া যায় না।’

আড়াইহাজারের ইউএনও বলেন, ‘আমাদের এলাকার যেসব কারখানা থেকে রংমিশ্রিত পানি নদে ফেলা হচ্ছে, প্রথমে ওইসব কারখানা বন্ধ করা হবে। পরে নরসিংদীর কারখানাগুলো বন্ধ করার চেষ্টা চালাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নদ রক্ষা বিষয়ে উপজেলা পরিষদ সভায় আমরা আলোচনা করেছি এবং তাতে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে আমার সংবাদকে বলেন, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের ডাইং কারখানাগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) আছে। তবে কখনো কখনো কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। তবে কোন কারখানাগুলো নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টিএইচ