টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর বলিভদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও ইউপির মাঠ দখল করে ঠিকাদারী কাজে ব্যবহূত পিচ, পাথর, বালি ও পিচ গলানোর চুল্লি মেশিনের বিকট শব্দে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটেছে।
এছাড়াও স্কুলের মাঠে সরকারি রাস্তার গাছের বড় বড় গুড়ি খড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ওই ইউনিয়নের সকল জনসাধারণের পরিষদে সেবা নিতে আসা গ্রহীতারা সেবা নিতেও চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন সোহাগ গত সোমবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সরজমিনে, বলিভদ্র ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই প্রতিষ্ঠানের একই মাঠ হওয়ায় সেই মাঠে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তার নিজস্ব অপূর্ব ট্রের্ডাসের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী রফিকুল ইসলাম তালুকদার রফিক সে ওই কাজের মালামাল ও নির্মাণ সামগ্রী রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
শুধু এই কাজেই শেষ নয় স্কুলের মাঠে সরকারি রাস্তার গাছের বড় বড় গুড়ি খড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এতে করে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নানা কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী শরীফ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ রফিক চেয়ারম্যান তার নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সব কাজের মালামাল রেখে ব্যবহার করে আসছে। সে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি হওয়ায় দাপটে এ সকল কার্যক্রম অ্যবহত রেখে ব্যক্তিগত ঠিকাদারী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে জানান, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের ভিতরে পাথর, বালি, খোয়া, তরল পিচ ভর্তি ড্রাম রেখে শিশুদের খেলার মাঠটি অপরিষ্কার করে রেখেছে, পিচ গলানোর চুল্লি মেশিনের বিকট শব্দে বিদ্যালয়ের ছোট বাচ্চারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার অধিকতর সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক সময় অনেক শিশু বাচ্চারা খেলাধুলা করতে গিয়ে সিমেন্টের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে অনেকেই ব্যথা পেয়ে আহত হয়ে থাকে। বিষয়টি জরুরিভাবে প্রতিকার হওয়া দরকার।
বলিভদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম, সোহান মিয়া ও সোহেল রানাসহ অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, মাঠে রফিক চেয়ারম্যান রাস্তা তৈরির মালামাল রাখার কারণে আমরা খেলাধুলা করতে পারিনা। পাথর ও সিমেন্টের খুটি তৈরি করে রাখছে খেলতে গেলে অনেক সময় ব্যাথা পাই। এগুলো মাঠ থেকে সরানো দরকার। সরকার যেন তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। আমরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত।
এ ব্যাপারে বলিভদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদের একই মাঠ। দীর্ঘদিন যাবত এই দুই মাঠে পাঁচপটলের পল্টন মোড়ের রাস্তা পাঁকাকরণ কাজের পিচ, পাথর, বালি ও পিচ গলানোর মেশিন চালু করে তার শব্দে সমস্যা তো হয়ই। তারপরেও স্কুলের মাঠে সরকারি রাস্তার গাছের বড় বড় গুড়ি খড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। সব মিলিয়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হয়। এই কাজ এখানে করা ঠিক না।
অভিযোগকারী নাসির উদ্দিন সোহাগ জানান, রফিকুল ইসলাম তালুকদার ইউপির জায়গাসহ বিদ্যালয়ের মাঠ তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আসছে। ফলে আমাদের ইউনিয়নের জনগণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সে তার ঠিকাদারী কাজে ব্যবহূত পিচ, পাথর, বালি ও পিচ গলানোর চুল্লি মেশিনের বিকট শব্দ, ও চুল্লির ধোঁয়ায় পাশের মসজিদের রং ওঠে যাওয়াসহ মুসল্লিদের নামায আদায়ে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও স্কুলের মাঠে সরকারি রাস্তার গাছের বড় বড় গুড়ি খড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এঘটনায় তদন্তপূর্বক অতি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণে ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রীর জোর হস্তক্ষেপ কমানা করছি আমরা এলাকাবাসী।
ইউনিয়নের রাস্তার উন্নয়নের কাজে তার ঠিকাদারী মালামাল সরকারি জায়গায় রেখে করতে পারেন বলে জানিয়ে বলিভদ্র ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমার ইউনিয়নের যেকোন উন্নয়ন কাজের বালি, পাথরসহ সব মালামাল রাখার দায়িত্ব আমার। সেক্ষেত্রে আমি রেখেছি। তবে, স্কুল মাঠে খড় দিয়ে রাস্তার গাছ কেটে গুড়ি ঢেকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নায়েব ইমরান হোসেন তিনি হিসাব করে রেখেছেন গাছের গুড়ি। এই গাছগুলো ঝড়ে পড়েছিলো। হেফাজতে রাখার জন্য এভাবে রাখা হয়েছে।
গাছের ব্যাপারে ওই ইউনিয়ন ভূমি তহশীলদার ইমরান হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিব লোকমান হোসেন জানান, এসকল রাস্তা নির্মাণের সামগ্রী রাখতে চেয়ারম্যানকে বারণ করলেও কোন কর্ণপাত করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে ধনবাড়ী ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শিশুরা খেলাধুলা করবে। সেখানে কেউ কোন প্রকার মালামাল রাখতে পারবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টিএইচ
