শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

নামের কারণে দেড়যুগ বঞ্চনার শিকার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

নামের কারণে দেড়যুগ বঞ্চনার শিকার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ

শুধু জিয়াউর রহমান নামের কারণে দেড়যুগ ধরে বঞ্চনার শিকার ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা। যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ করলেও জিয়া নামের কারণে বিগত আ. সরকার কলেজটিকে এমপিওভুক্তির বাইরে রাখে। 

ফলে দীর্ঘ ১৮ বছর আগে কলেজের ডিগ্রি সেকশনে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ছাড়া মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনতিবিলম্বে কলেজটির ডিগ্রি সেকশন এমপিওভুক্ত করে নিয়োগদানের তারিখ হতে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। একইসঙ্গে কলেজের হারানো গৌরব ফিরে পেতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই বলেও জানান এলাকাবাসী ও কলেজ কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বিএনপি সরকারের আমলে ২০০০ সালে কালিগঞ্জ-জীবননগর মহাসড়ক সংলগ্ন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুরে গড়ে ওঠে শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ। শিক্ষায় অনগ্রসর এ এলাকার মানুষের মনে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াতে তৎকালীন বিএনপি সরকার ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টার কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ডিগ্রি সেকশনের পাঠদানের অধিভুক্তি করা হয় ২০০৫ সালের ১৩ জুলাই। 

এর পরই ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। তখনি কলেজের নাম পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করতে থাকে স্থানীয় আ.লীগ নেতারা। কিন্তু শিক্ষকদের অনঢ় অবস্থানের কারণে কলেজের নাম পরিবর্তন করতে না পেরে কলেজটিকে অকার্যকর করার পাঁয়তারা শুরু করে। 

আ.লীগ নেতারা ওই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের জিয়া কলেজে ভর্তি না হতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়। এরপরও যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতো তাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এমপিও আবেদনের জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় আ. এমপির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি ডিও লেটার। দীর্ঘ ১৮ বছরে কলেজের জন্য কোন প্রকার সরকারি অনুদান আসেনি।

৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত উপজেলার স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটি ছিলো বিগত আ. সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। ১৮ বছর আগে যেসব শিক্ষকরা তাদের ভাগ্য বদলের আশায় শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করেছিলেন তাদের দুর্দশা পিছু ছাড়েনি। 

এসব শিক্ষকরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হয়েও আজ তারা সমাজের কাছে অসম্মানিত। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অনাহারে অর্ধাহারে থাকা এসব শিক্ষকদের দাবি তাদের সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ। 

চাকরির বয়স শেষের দিকে আসা এসব শিক্ষকরা জানান, তাদের হারানো সম্মান ফিরে পেতে ও আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করে শিক্ষক হিসাবে যোগদানের তারিখ হতে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে নামের কারণে বৈষম্যের শিকার এ প্রতিষ্ঠানটির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই।  

এ বিষয়ে কলেজের ডিগ্রি সেকশনের প্রথমদিকে নিয়োগ পাওয়াদের একজন প্রভাষক মো. ছামাদুজ্জামান বলেন, ২০০৩ সালে আমাকে শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি সেকশনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই থেকে ২১ বছর যাবত বেতন-ভাতা তো দূরের কথা কলেজ থেকে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। 

বিগত দেড় যুগ ধরে আমরা বৈষম্যের চরম সীমা অতিক্রম করে আসছি। গত আ. সরকারের কাছে আমাদের একটায় অযোগ্যতা আমরা শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। অনতিবিলম্বে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করে নিয়োগদানের তারিখ হতে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. শওকত আলী বলেন, উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চনার শিকার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ। সকল যোগ্যতা থাকার পরেও শুধু নামের কারণে ডিগ্রি সেকশনের এমপিও দেয়া হয়নি। এমপিওর কাগজপত্র জমা দিতে শত চেষ্টার পরেও ডিও লেটার দেননি আ.গীগের স্থানীয় এমপি। 

বরং উপজেলার শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপিঠকে দুর্বল করতে সকল ঘৃণ্য অপচেষ্টা অব্যহত রাখে। কলেজটির ডিগ্রি সেকশনের শিক্ষদের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। আমি তাদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানায়। একইসঙ্গে কলেজটি জাতীয়করণের মাধ্যমে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

টিএইচ