আউশ মৌসুমে ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে প্রথমবারেই ভালো ফলন পেয়েছেন নীলফামারী জেলার কৃষকরা। সাধারণত অন্য জাতের ধান চাষ করে যেখানে প্রতিবিঘা (৩০ শতক) ১২ থেকে ১৮ মণ ধান পেত সেখানে এবার উপজেলা কৃষি দপ্তরের পরামর্শে ব্রি-৯৮ জাতের ধান চাষ করে প্রতিবিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ ফলন পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকের দিগন্ত ভরা মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে আগাম ধানের স্বর্ণালী হাসি। অগ্রহায়ণ নয়, নিষ্ফলা আশ্বিনে মঙ্গাজয়ী আগাম জাতের নতুন ধানের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার মূল্যে পেয়ে হাজারো কৃষক পরিবারে এনেছে সমৃদ্ধির হাসি।
ধানের পাশাপাশি গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাট-বাজারে চলছে কাঁচা খড়ের রমরমা ব্যবসা। চাহিদা থাকায় কৃষকের মাঠে মাঠে ধানের কাঁচা খড় কেনার জন্য মৌসুমি খড় ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। কাটা-মাড়াই শেষে তারা খড় কিনে বাজারে বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছেন।
অপরদিকে কৃষক মাঠের খড় বিক্রি করে অনেকটাই তুলছেন চাষের খরচ। এমনটাই জানান তারা। এ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে আগাম নবান্নের উৎসবের মাতোয়ারা। উপজেলার সর্বত্র আগাম আমন ধানকাটা-মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে।
ধান কাটার পর আগামী সপ্তাহে আগাম আলুসহ শীতকালীন রবিশস্য চাষে চলছে ব্যাপক প্রস্ততি। এজন্য মাঠে-মাঠে কৃষাণ-কৃষাণিরা ক্ষেতমজুরের ব্যস্ততা যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষক তাদের উঁচু সমতল এক ইঞ্চি জমি পতিত রাখেনি। এসব জমিতে ভুট্টা আগাম আলুর মধ্যেবর্তী সময়ে বাড়তি লাভজনক আবাদ হিসেবে ব্রি-৯৮ জাতের নতুন ধান চাষ করেছেন। স্বল্পমেয়াদি আগাম জাতের এ ধান চাষে ফলন দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি চারা রোপণের শুরু থেকে অনুকূল আবহাওয়া, যথাসময়ে ভারী থেকে হালকা বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফলনে ছাড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রা।
কৃষি প্রণোদনার উচ্চ ফলনশীল, কম সময়ে উৎপাদিত খরা সহিষ্ণু ব্রি- ৭১,৭৫, ৮৭, ৯৪, ৯৮ সহ হাইব্রিড, চায়না জাতের ধানের ভালো ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বাজারে ধানের দামের সঙ্গে খড়ের উচ্চমূল্য পেয়ে ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষক বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। এ বাড়তি আয়ে আলুসহ অন্য রবি ফসল চাষে খরচ মেটাচ্ছেন চাষি। দুঃসময়ে কৃষকের ঘরে ধান উঠায় ধান ও চালের বাজার দ্রুত স্থিতিশীল হচ্ছে। এতে কৃষক, খেতমজুর, গবাদিপশু পালনকারী, ধান, চাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
উপজেলার উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের চাষি মো. শামীম হোসেন বাবু জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এ বছর চার বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্রি ধান ৯৮ চাষ করেছি। বিঘায় ফলন হচ্ছে ২০/২৫ মণ। প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ২৮ কেজি ৭২০ টাকা দরে। প্রতিবিঘা জমির খড় বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকায়। যা ধান ও খড় বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম জানান, চলতি মৌসুমে চার হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের এ ধান চাষ করা হয়েছে। এ উপজেলায় ধানসহ আগাম আলু চাষে রোল মডেল। তাই এবার কৃষকদের ব্রি ধান-৯৮ চাষের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এই ধানে সেচ ও সার কম লাগে। ধানের আকার চিকন এবং লম্বা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষক বেশি লাভ করতে পারবে। আগামীতে কৃষকরা ব্রি-৯৮ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
টিএইচ