পটুয়াখালীতে পৃথক দুটি ঘটনায় নারী কনস্টেবল ও কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। উভয়ের মরদেহ ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দেয়া ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। একটি পটুয়াখালী পুলিশ লাইনের নারী ব্যারাক ও অপরটি পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাসে ঘটেছে।
পুলিশ ছুরাতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। দুটি ঘটনাই রোববার (১৯ জানুয়ারি) ঘটেছে। নিহতরা হলেন- পুলিশ কনস্টেবল তৃষ্ণা বিশ্বাস ও দ্বাদশ শ্রেণির কলেজছাত্রী রিয়ামনি আক্তার মিলা। এদিকে, কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তার প্রেমিক নাহিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী পুলিশ লাইনের নারী ব্যারাকে কনস্টেবল তৃষ্ণা বিশ্বাস আত্মহত্যা করেন। গুাকর রোববার নারী ব্যারাকের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যার সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। নিহত তৃষ্ণা বিশ্বাস ২০২৩ সাল থেকে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। তার বিপি নম্বর ০৩২৩২৫১১৯৬ এবং কনস্টেবল নম্বর ১২৫৫। তিনি মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের কৃষ্ণ বিশ্বাসের মেয়ে।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, তৃষাকে তার কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। খবর পেয়ে সহকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেন। এর পরই জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) আহমেদ মাইনুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাজেদুল ইসলাম, সদর থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ আহমেদসহ আরও অনেকে উপস্থিত হন। এই আত্মহত্যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদ মাইনুল হাসান বলেন, আমরা নিহতের পরিবারকে খবর দিয়েছি। পরিবারের সদস্যরা আসলেই মরদেহ উদ্ধার করে সুরাতহাল সম্পন্ন করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে।
এদিকে, একই দিন পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজে হোস্টেলে নিজ কক্ষে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ওই কলেজের দ্বাদশ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী রিয়ামনি আক্তার মিলা। দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মিলার সহপাঠী রুমমেট আনহা জানায়, কলেজ হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ২০০১ নাম্বার রুমে তারা একসাথে থাকতো। সকালের নাস্তা করার জন্য মিথিলা ও সে নিচে যায়। সাড়ে নটায় রুমে ফিরে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে জানালা দিয়ে মিলার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায় তারা। তাদের ডাক চিৎকারে অন্যান্য মেয়ে ও শিক্ষকরা এসে দরজা ভেঙে তার অচেতন দেহ পটুয়াখালী হাসপাতাল নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোদাচ্ছের বিল্লাহ জানান, মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল।
খবর পেয়ে মা পারভিন বেগম দশমিনা থেকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। মেয়ে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তার মেয়ে কিভাবে মারা গেল সবার কাছে জানতে চান পারিবারিক সূত্র জানা যায়, দশমিনা উপজেলা সদরের পূঁজাখোলা এলাকার মনিরুল ইসলাম হাওলাদারের মেয়ে। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপনের আগৈরঝাড়া শাখার ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন।
এদিকে, মিলার মৃত্যুর ঘটনায় তার বয়ফ্রেন্ড নাহিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। নাহিয়ানের দাবি, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন সম্পর্ক চলে আসছিল। রোববার (১৯ জানুয়ারি) শহরের কাঠপট্টি এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ছিলেন। পুলিশ তার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করছেন। তবে আত্মহত্যা সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পটুয়াখালী সদর থানার ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। তাকে আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য তার তথা কথিত স্বামী রাইয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে
টিএইচ