শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও

পত্নীতলায় চীনামাটি ও রূপা উত্তোলন শুরু হয়নি

পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি

পত্নীতলায় চীনামাটি ও রূপা উত্তোলন শুরু হয়নি

নওগাঁর পত্নীতলায় উৎকৃষ্ট মানের চীনামাটি ও রূপার সন্ধান পাওয়া যায়। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও তা উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি কোন সরকার। বর্তমানে জরিপের নিদর্শন চিহ্ন অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। অভিজ্ঞমহলের দাবি, এ স্মৃতিচিহ্নও একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কবে শুরু হবে উত্তোলন কার্যক্রম তা এখন শুধুই প্রশ্ন (?)

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ড্রিল কোরের শিলাখণ্ডে যেখানে টনপ্রতি ১৪ থেকে ২৮ গ্রাম রূপার উপস্থিতিকে আকর হিসাবে এবং ইন্দোনেশিয়ায় টনপ্রতি ১৪৭ গ্রাম রূপার উপস্থিতিকে রিসোর্স হিসাবে উল্লেখ করা হয় সেখানে পত্নীতলায় ড্রিল কোরের শিলাখণ্ডে প্রাপ্ত রূপার পরিমাণ টনপ্রতি ২৫ গ্রাম। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) তৎকালিন মহাপরিচালক মুহাম্মদ খুশিদুল আলম একটি পত্রিকার প্রতিবেদক অরুণ কর্মকারকে এ কথা জানান। 

এই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, দেশের উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভে যেসব শিলায় সোনা, রূপা ও দস্তার সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলো মূলত প্রিক্যামব্রিয়ান আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা এবং রাজমহল ট্র্যাপ। সন্ধানপ্রাপ্ত এসব মূল্যবান ধাতব পদার্থের অর্থনৈতিক মূল্যায়নের জন্য ব্যাপক ভূতাত্ত্বিক ও ভূব্যবসায়নিক জরিপ এবং ভূতাত্ত্বিক খননের প্রয়োজন রয়েছে। এসময় অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ মনোয়ার ও পরিচালক (অপারেশন) এম নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
 
নওগাঁ জেলা সদর হতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পত্নীতলা উপজেলা সদর নজিপুর পৌরসভা এলাকা। এই উপজেলা সদর হতে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে পাটিচরা ইউনিয়নের নজিপুর-ধামইরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে জিয়া বাজার সংলগ্ন আমবাটি গ্রাম। এই গ্রামের পাশে চকরাধাঁ মৌজার একটি পুকুর পাড়ে ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের একটি শক্তিশালী অনুসন্ধানী টিম-জরিপ, জায়গা নির্ধারণ ও খনন কার্য পরিচালনা করেন। এরপর ভূপৃষ্ট থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট গভীরে শত-শত স্টিলের পাইপ বসিয়ে এ খনন কার্যক্রম পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের লোকজন বলে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ প্রকল্পের জরিপ ও খনন কার্যক্রম চলাকালে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ছিল জনসাধারণের মাঝে। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ চরমভাবে দানা বেঁধে উঠতে শুরু করলে ক্রমান্বয়ে প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন সরকারের আমলেই গুরুত্ব পায়নি এ প্রকল্পটি। দেশের খনিজ মানচিত্রে এ প্রকল্পটি একটি বিন্দুতে চিহ্নত হয়ে রয়েছে মাত্র।

উক্ত আমবাটি গ্রামের জমির মালিক আলীমুদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান (৬২) জানান, উল্লেখিত সময়ে এ খনিজের স্থানটি খননকার্য চলাকালে প্রায় শতাধিক দেশি—বিদেশি কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। খনন কার্যক্রমের সময় নিচ থেকে কালো ধরণের দূর্গন্ধযুক্ত মাটির মতো এক ধরণের পদার্থ উঠে আসতো। কর্মকর্তারা রাতের আঁধারে এসব পদার্থ ত্রিপল দিয়ে ঢেঁকে জিপ গাড়ি করে কোথায় নিয়ে যেতেন তা জানতে চাইলেও আমাদেরকে জানাতেন না। 

খননকৃত জায়গাটির চারিপার্শ্বে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরেছিল। এ কার্যক্রম চলাকালে তাদের নিজস্ব জেনারেটরের আলো দিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোও আলোকিত হয়ে উঠেছিল। এছাড়া স্থানীয় আমবাটি মোড়ে একটি বাজারও গড়ে উঠেছিল। এ জরিপ টিমটি প্রায় ১০বছর এ কার্যক্রম চালান। দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই পরিবার নিয়ে এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এ জরিপ দলটি খনন কাজের সময় স্থানটির চারিপাশে ৪টি সিমেন্ট, রড ও ইটের পিলার তৈরি ও তাতে স্টিলের অ্যাঙ্গেল দিয়ে টাওয়ারের মতো উচুঁ করে এবং এর উপর উঠে পাইপ দিয়ে খনন কাজ চলতো। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে তারা খননের স্থানটি বন্ধ করে দেন। 

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, উপজেলা সদর ডাকবাংলোতে এ জরিপ কাজ চালানোর সময় উচুঁমানের কর্মকর্তারা পরিবারসহ বসবাস করতেন। তাদের বেশির ভাগই অবাঙালি বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানি সাদা চামড়ার লোক ছিলেন। তারা আরো জানান, উল্লেখিত স্থানটিসহ বর্তমান নজিপুর পৌর এলাকার চকনিরখিন মোড় ও পাটিচরা ইউনিয়নের গাহন মৌজায় ২টি স্থানেও একই সময় জরিপ ও খননকার্য চালানো হয়। তবে তার কোন স্মৃতিচিহ্ন বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যায় না। 

টিএইচ