শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

পরিবারের তিনজন প্রতিবন্ধী নিয়ে আনোয়ারের মানবেতর জীবন

বরগুনা প্রতিনিধি

পরিবারের তিনজন প্রতিবন্ধী নিয়ে আনোয়ারের মানবেতর জীবন

বরগুনার তালতলী উপজেলায় একটি গ্রামের একই পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে তিনজনই প্রতিবন্ধী। সরকারি সহায়তার আশায় বারবার জনপ্রতিনিধি আর প্রশাসনের কাছে ঘুরে ছোট ছেলে রাকিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা উপবৃত্তি আর দুইজন পায়না কোনো সহায়তা। তবে প্রতিবন্ধী পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন সমাজ সেবা অধিদপ্তর।

বরগুনার তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের চান্দখালী গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন। এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে হাঁস, মুরগি, ডিম, শাকসবজি সংগ্রহ করে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বিক্রি করেন তিনি। যা উপার্জন হয় তা দিয়েই কোনোমতে চলে তাদের চারজনের সংসার। তবে স্বল্প উপার্জনে কখনো খেয়ে না খেয়ে আবার কখনো আধপেট খেয়ে চলে তাদের জীবন। ১৪ বছর আগেও আনোয়ার হোসেনের জীবন ছিল সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নময়। 

একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তার জীবনের রং। এখন প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। নিজের জমি জমা না থাকলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে রয়েছে আনোয়ারের বাবার তোলা একটি ঘর। সেই ঘরেই এখন তার বসবাস। শুধু তিনিই নন তার ঘর আলো করে আসা দুই ছেলেও মানসিক ভারসম্যহীন। ছেলে-সন্তান স্ত্রী নিয়ে এখন তার দুর্বিষসহ জীবন সংসার তার। ছেলেদের উন্নত চিকিৎসা, নিজের চিকিৎসা ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন এই পরিবার। 

কোন আশ্বাস নয়, দ্রুত তাদের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডসহ অসহায় এ পরিবারকে সহযোগিতার জন্য সরকরি-বেসরকারি ও বৃত্তবানরা এগিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর। সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে সমাজসেবা অধিদপ্তসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, অনাহারে অর্ধাহারে জীবন চলে আমার পরিবারের। 

আমার স্বামী প্রতিবন্ধী মানুষ একটি সড়ক দুর্ঘটনায় সেও প্রতিবন্ধী হয়ে যায় সে আমাদের প্রতিরাসীদের থেকে শাক, সবজি, ডিম, হাঁস, মুরগি, যা পায় তা কাছাকাছি বিক্রি করেন। আর তাতে যে টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। 

আর আমি যে অন্য কারো বাড়িতে কাজ করব সে সুযোগটাও আল্লাহ আমাকে দেয়নি কারণ আমার সবসময় ছেলে দুটো কাছে আমাকে থাকতে হয় ওদের দেখলে মানুষ ভয় পায় তাই ওদেরকে মানুষ একা পেলে মারধর করে সেজন্য সবসময়ই ওদের সাথেই আমাকে থাকতে হয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সরকার আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে আমার স্বামী ও দুই প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে সংসার কোনোমতে চালাতে পারতাম।

এলাকার বাসিন্দা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হারুন সরদার বলেন, প্রতিবন্ধী অসহায় এই পরিবারটির পাশে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে পরিবারটি। তাই আমাদের দাবি পরিবারটিকে সুস্থ সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়ার।

বরগুনা সমাজ সেবা কার্যালয় উপপরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ এই অসহায় দরিদ্র পরিবারটি যাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা পেয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে সে বিষয়ে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ছাড়া পরিবারটিকে আরও সহযোগিতার চেষ্টা করবেন তিনি।

টিএইচ