বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post
সিলেটের হরিপুরবাজার

প্রতারণার মাধ্যমেই জমজমাট পাখির মাংস বিক্রি

সিলেট প্রতিনিধি

প্রতারণার মাধ্যমেই জমজমাট পাখির মাংস বিক্রি

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার। টিনের ছাউনি আর বেড়ায় নির্মিত প্রায় এক ডজন খাবারের হোটেল। সস্তা দামের চেয়ার আর টেবিলে সাজানো। কোথাও আবার চৌকিতে শীতলপাটি পেতে বসার ব্যবস্থা। আহামরি জৌলুস না থাকলে এই সকল সস্তা খাবার হোটেলগুলো ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয়। আর জনপ্রিয়তার নেপথ্যে বন্যপাখি ও অতিথি পাখির মাংস। 

তবে উপজেলা প্রশাসনের রাসায়নিক পরীক্ষায় তা পাখির মাংস নয়, হাঁসের মাংস হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই ১২ হোটেলে অতিথি পাখি ও বন্য পাখি বিক্রি হচ্ছে। যার প্রমাণও পেয়েছেন তারা বিভিন্ন সময়ে। 

এ অবস্থায় ভোক্তাদের সাথে প্রতারণার অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে হোটেলগুলোতে পাখির মাংস বিক্রয়ের রমরমা ব্যবসা চলছে বলে তাদের অভিযোগ।

সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ১২টি খাবারের হোটেলে পাখির মাংস বিক্রি চলছে। পরিচয় গোপন রেখে বিক্রেতাদের সাথে আলাপকালে তারা পাখির মাংস বিক্রির কথা বলেন। তারা জানান, নানা প্রজাতির পাখির মাংস বিক্রি হয়। এর মধ্যে শীতকালে অতিথি পাখি আর অন্য সময়ে বন্যপাখির মাংস বিক্রি করেন। দেড়শ টাকা প্রতি পিস মাংস বিক্রি হয় এখানকার খাবার হোটেলগুলোতে।

স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন অভিযানে আসলে পাখির মাংসকে হাঁস ও কোয়েলের মাংস বলে চালানোর অপচেষ্টা করা হয়। এছাড়া বছর খানেক আগে উপজেলা প্রশাসনের রাসায়নিক পরীক্ষায় সকল মাংসকে হাঁসের মাংস বলায় ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। 

এসব খাবার হোটেলে প্রতিদিনই গড়ে ২০০ পিস রোস্ট কিংবা মসলাদার মাংস বিক্রি করা হয়। পাখি ভেদে মাংসের মূল্য ১৫০-১৬০ টাকা প্রতি পিস রাখা হয়। নিজেদের পাশাপাশি স্থানীয় শিকারি চক্রের কাছ থেকে ওই পাখিগুলো গোপনে ক্রয় করে হোটেল মালিকরা। গত ৩ বছরে স্থানীয় বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনে মোবাইল কোর্ট ৩ বার অভিযান চালালেও হোটেলগুলোকে পাখির মাংস বিক্রি কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।

সেভ দ্যা হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল হাদী বলেন, হাঁসের মাংস বিভিন্নভাবে কাটা হয়, তা একটি বাঁকা করে কাটলে কখনো ডাহুক, কখনোবা অতিথি পাখি বালিহাঁস বলে চালিয়ে দেয়া হয়। বিক্রেতারা একই পাত্রে রান্না করায়, তাদের ধারণা আছে কোনটা হাঁস আর কোনটা পাখির মাংস। তাই উপজেলা প্রশাসনের রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত নমুনায় হাঁসের মাংস তুলে দিয়েছে। 

এছাড়া পাখিপ্রেমিক সোসাইটি নামে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন বন ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, হরিপুর রাজারের খাবার হোটেলগুলোতে মূলত হাঁস ও কোয়েলের মাংস বিক্রি হয়। যদি বন্যপাখি বিক্রয়ের কোনো আলামত পাওয়া যায় তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। ওই হোটেলগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হবে। 

জৈন্তাপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, পাখির মাংসকে হাঁসের মাংস বলে বিক্রি করাও একধরনের প্রতারণা। আবার অতিথি পাখি কিংবা বন্যপাখির মাংস বিক্রিও আইনবিরুদ্ধ। 

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী পাখি হত্যা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইন লঙ্ঘন করলে ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ২ বছরের জেলের বিধানও রয়েছে। 

টিএইচ