কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসকের নিকট আলাদা আলাদা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
গত বুধবার ওই বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী অফিস সহকারীসহ ছয় শিক্ষক কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগকারীরা হলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শামছউদ্দিন, সহকারী শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম, মো. শাজাহান, মো. মাহবুব আলম, মো. কামরুল ইসলাম, সালমা আক্তার ও অফিস সহকারী মো. আবু সাঈদ।
এদিকে ৩ আগস্ট অভিভাবক সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মো. খোকন, মো. নাসির উদ্দিন, জিলু ও মমতাজ করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
শিক্ষকদের দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, মো. নজরুল ইসলাম ২০১০ সালে বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (নন এমপিও) হিসেবে নিয়োগ পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েন। ফলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক মামলায় (আপীল এন্ড আরবিটেশন বোর্ড, ঢাকা) এর অনুমোদন সাপেক্ষে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করেন। পরে তিনি আপোষ মীমাংসায় ২০১৯ সালে প্রধান শিক্ষক পদ পুনরায় ফিরে পান।
অভিযোগে আরো বলা হয়, পুনরায় প্রধান শিক্ষক পদ ফিরে পেয়ে মো. নজরুল ইসলাম প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজসে শিক্ষক লাঞ্ছনাসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক বেতন, ভর্তি ফি ও বিদ্যালয়ের বিল্ডিং ঘর বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন ওই প্রধান শিক্ষক। আর এসবের প্রতিবাদ করাই তিনি ওই বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত দুই শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম ও সালমা আক্তারকে অবৈধভাবে সাময়িক দরখাস্ত করেন। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উচ্চ ডিগ্রির সার্টিফিকেটেও জালিয়াতির বিষয়টি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তকৃত দুই শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম ও সালমা আক্তার জানান, নিজের অপকর্ম নিয়ে কেউ যেন কিছু বলতে না পারে, সেজন্য বিনা কারণে প্রধান শিক্ষক আমাদের সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আমাদের সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আমাদের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা অফিস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চলতি বছরের ১৪ মে একটি পরিপাত্র জারি করে।
বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ১৭১ টাকার স্থলে ৪০০ টাকা করে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
অতিরিক্ত প্রতি জনে ২২৯ টাকা করে ১২৫ জনের সর্বমোট ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সেশন ফি ও অন্য ফি ৭৩০ টাকা ছাড়াও ষষ্ঠ সপ্তম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট ফির নাম করে ২৫০ টাকা করে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ দায়ের পর আদায় করা অতিরিক্ত টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে আমার যোগদানের পর থেকে কতিপয় সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা করে আসছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন, অন্য শ্রেণির ভর্তিসহ সেশন ফি আদায় করেছি। তবে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী পলাশ কুমার বসুর নির্দেশেই অতিরিক্ত টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহসানুল জাহীদ জানান, সাময়িক বরখাস্তকৃত দুই শিক্ষক এমপিও অনুযায়ী নিয়মিত বেতন ভাতাদি পাচ্ছেন। তবে তারা শ্রেণিকক্ষে পুনরায় পাঠদানের বিষয়ে এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার বসুর নিকট অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটি ছাড়া বিদ্যমান সংকট নিরসন হবেনা। তবে এ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বোর্ডকে লিখিত চিঠি দিয়েছি।
বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে এডহক কমিটির বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার বসু বলেন, অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সকল শিক্ষার্থী যেন অতিরিক্ত টাকা ফেরত পায় সেজন্য উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার শারমিন সুলতানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশা করি এ সংকট দ্রুতই কেটে যাবে।
সাময়িক বরখাস্তকৃত দুই শিক্ষকের বিষয়ে ইউএনও বলেন, চলমান অ্যডহক কমিটি নিয়োগ বা বরখাস্তের মত কোন কাজে জড়িত থাকতে পারে না। পূর্ববর্তী কমিটি তাদের বরখাস্ত করেছিল। যেহেতু দুইজন শিক্ষক বরখাস্ত রয়েছেন সেহেতু বিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে তাদের স্ব পদে পুনঃবহালের জন্য আমরা বোর্ডে চিঠি দিয়েছি।
টিএইচ