দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে ৭টি কারাগার সবজি উৎপাদন করলেও কুষ্টিয়া জেলা কারাগার এদের মধ্যে রয়েছে শীর্ষে। ২২ একর জমির উপর কুষ্টিয়া কারাগার প্রতিষ্ঠা হলেও এর মধ্যে ১২ একর জমির উপর কারাগার, অফিস রয়েছে। বাকি ১০ একর জমির মধ্যে ৮ একর জমিতে গাছগাছালিসহ বিভিন্ন ফলফুলের বাগান এবং ২ একর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের জেল সুপার আ. বারেক জানান, বিভিন্ন সময়ে এই পরিত্যক্ত জমি অনাবাদি হিসেবে পড়েছিল। তিনি যোগদান করার পর থেকে ওই ৮ একর জমি পরিত্যক্ত না রেখে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এক ইঞ্চি জমিও পরে থাকবে না সব জমিকেই আবাদযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। তার এ ঘোষণার উপর আস্থা রেখে ওই সব জমিতে ধান ও সবজি আবাদ শুরু করা হয়। এতে করে ভাল ফলন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ধান, ভুট্টা, বাঁধাকপি, ফুলকপি কলমি শাক, অ্যাংকর শাক আবাদ করে একদিকে যেমন সরকারের কোষাগারের খরচ বাঁচছে তেমনি হাজতি ও কয়েদিরা টাটকা এবং ভেজালমুক্ত খাবার খেতে পারছে। উৎপাদিত সব ফসলই কয়েদি ও হাজতিদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধান উৎপাদন হয়েছে এক মৌসুমে দুইশ মন।
জেলা কারাগারের মধ্যের জমিতে শীতকালিন সবজি ৫ হাজার ৬৮০ কেজি, জেলখানার বাহিরের জমিতে ৩ হাজার কেজি সবজি আবাদ হয়েছে গত এক মাসে। যার প্রতিদিন জেলখানায় সাত হাজার কেজি সবজির প্রয়োজন (হাজতি ও কয়েদিদের অবস্থান হিসেবে)। দুই একর পুকুরে মাছের আবাদ করা হচ্ছে। এতে করে জেলখানার খাবারের মানও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের ফসল উৎপাদন ও কারাবন্দিদের খাবারের বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক সন্তুষ্ট হয়ে এবং ইচ্ছা মনোবল থাকলে যে সফল হওয়া যায় তার চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী সচিবের নিকট পত্র প্রেরণ করেছেন।
শুধু আবাদই নয়, জেলখানার ভিতরে হাজতি ও কয়েদিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের কারিগর। এই জেলাখানায় উৎপাদিত পণ্য এবার বাণিজ্য মেলায় চার হাজার দুশ টাকার পণ্য পাঠিয়ে চার হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। পণ্যের মানও বেশ ভালো হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
জেল সুপার আরো বলেন, জেলখানা থেকে হাজতি ও কয়েদিরা যে প্রশিক্ষণ পাচ্ছে তারা বের হয়ে বাড়ি ফিরলে অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থেকে এই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের সকল দুর্নীতি অনিয়ম রুখে দিয়ে বর্তমান জেলা সুপার আ. বারেক এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। জেলখানার এক ইঞ্চি জায়গাও পরে থাকবে না এই নীতি গ্রহণ করে উৎপাদনে ব্যাপক সারা জাগিয়েছে। সকাল-বিকেল চলছে ফসলের পরিচর্যা।
হাজতিরা জানান, তারা এখানে খুবই ভালো আছে। খাবারের মানও ভালো। সকল কষ্টের অবসান ঘটিয়েছেন বর্তমান জেলা সুপার আ. বারেক।
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে যেভাবে ফসল উৎপাদন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে দেশের অন্য জেলখানার কর্মকর্তারাও জমি ফেলে না রেখে ফসল উৎপাদনে অগ্রসর হবে এমনিটিই আশা করছে সুশীল সমাজ।
টিএইচ