ফেনী-২ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থীর প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আমিন বাজার এলাকায় জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীর গণসংযোগে এ চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় আমিন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং সদর উপজেলা আ.লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর নৌকার গণসংযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধ্য করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টা থেকে আমিন উদ্দিন বাজারে অবস্থান নিয়ে সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। বার্ষিক পরীক্ষার পর গত কয়েকদিন ধরে স্কুলের শীতকালীন অবকাশ থাকলেও শিক্ষকদের মাধ্যমে বাড়িতে খবর পাঠিয়ে তাদের সেখানে আসতে বাধ্য করা হয়।
এদের মধ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রায় ৩০০ ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি ছিল। তাদের সঙ্গে ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছাড়া অপর সব শিক্ষকই সড়কে দাঁড়িয়ে নৌকার শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী বিবি আয়েশা সুবর্ণা জানায়, তার বাড়ি পৌরসভার সুলতানপুর এলাকায়। স্কুল ছুটি থাকলেও স্যাররা নৌকার প্রচারণায় অংশ নিতে বাড়িতে খবর দেন। তাদের ক্লাসের ১১০ জনের মধ্যে ছাত্রদের উপস্থিতি কম থাকলেও ছাত্রীরা ছিল বেশি।
মাহমুদা নামে দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী জানায়, ‘ফেনীর গণমানুষের নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীকে বরণ করে নেয়ার জন্য সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। স্কুলের সভাপতি নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর ও স্যারদের সঙ্গে আমরা সবাই অংশ নিয়েছি।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া সুলতানা জানায়, স্যাররা আসতে বলেছেন, এজন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছি।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে স্কুলের সভাপতি নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাউকে আসতে বলেন নি। সাবেক কিছু ছাত্র-ছাত্রী নিজেরাই সেখানে অংশ নিয়েছেন। স্থানীয় কিছু শিক্ষক অংশ নিতে পারেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমির কুমার আচার্য জানান, প্রচারণায় শিক্ষকদের অংশগ্রহণে আচরণ বিধির বিষয়ে তার জানা নেই। স্কুলের পাশে এমপি আসছেন, এজন্য যাওয়ার প্রয়োজনবোধ হওয়ায় অংশ নিয়েছি। কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়েছে বলে তিনি জানান।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমগীর আলম ভূঞা জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এটা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যে বা যারা অংশ নিয়েছে তাদের ব্যক্তিগত দায়। স্কুল বন্ধ থাকায় বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি।
ধর্মপুর ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি এ এম জাফর উল্যাহ ভূঞা জানান, কিছু লোকের অতি উৎসাহীতায় আমরা বিব্রত। আমিন বাজারে শিক্ষক-ছাত্রীদের অংশ নেয়ার বিষয়টি নিয়ে স্কুলের সভাপতি নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীরকে বলা হলে তিনি কোন জবাব দিতে পারেনি।
ফেনী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর আসনে নির্বাচনকালীন নৌকার প্রার্থীর মিডিয়া সেলের প্রধান মামুনুর রশিদ মিলন জানান, স্কুলের ছুটিকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নেয়ার বিষয়টি সামাজিকভাবে দেখা হবে। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নয়। এমপি এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন বিধায় তাকে ভালোবেসে দল-মত নির্বিশেষে সবাই যোগ দিয়েছে। তবে শিক্ষকদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য না করে এড়িয়ে যান তিনি।
ফেনী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফি উল্লাহ জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। শিক্ষকরা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন। তারা কেন সেখানে যাবেন। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।
জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টিএইচ