শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

ফেনীতে লুট হচ্ছে নদীর বালু রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী 

ফেনীতে লুট হচ্ছে নদীর বালু রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ফেনীর পরশুরাম পৌর শহরের খন্দকিয়া ও দুবলার চাঁদ এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী নদী দেখলে বোঝার উপায় নেই যে ওই স্থানে বালু তোলা হচ্ছে। অথচ তার বিপরীত পাশেই চলছে বালু লুটের মহোৎসব। সেখানে  মাটি কেটে বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার। 

এ অবস্থা শুধু পৌর শহরেই নয়, তৎসংলগ্ন মির্জানগর ইউনিয়নের কাউতলী এলাকার চিত্র আরও ভয়াবহ। স্থানীয়রা স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। 

সরেজমিন কাউতলীতে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে দিবারাত্রি বালুর টাক চলাচল করছে। ফলে বেড়িবাঁধ খানাখন্দকে ভরে গেছে। ওই সড়কের পাশে আলী হোসেন মজুমদার বাড়ি সম্মুখস্ত স্থানসহ আশপাশের কয়েকটি স্পটে নদী থেকে দূরবর্তী স্থানে মাটি কেটে বালুমহাল তৈরি করা হয়েছে। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী একটি চক্র। এ কারণে স্থানীয়রা প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। শুধু তাই নয়, বালু উত্তোলনে জড়িতরা চাইলে নদীর পাশের যে কারো জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করেন। এরপর ওই জমিতেই ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করেন। স্থানীয়ভাবে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় আ.লীগের নেতারা।

এদিকে পরশুরাম পৌর শহরের বাউরখুমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে রয়েছে বালুমহাল। উপজেলা আ.লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও পরশুরাম ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর হোসেন চৌধুরী ইজারা নিলেও জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির দেয়া কোন শর্ত মানা হচ্ছে না। 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বছরে পরশুরাম উপজেলার একমাত্র বালুমহাল বাউরখুমায় ৮২ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা নেন মেসার্স শাপলা ট্রেডার্স। অথচ, সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজারা নেয়া বালুমহাল থেকে নদীর বাইরে দূরবর্তী স্থানে বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার। সড়কের পাশে রয়েছে বালুর স্তুপ।

সেখানে টিলার উপর একটি টিনের ঘরে দেখা মিললো স্থানীয় এক ব্যক্তির। তিনি নিজকে কৃষক পরিচয় দিয়ে জানান, প্রতি ফুট বালু ১৬ টাকায় বিক্রি করা হয়। এখানে নদী থেকে অনেকদিন বালু উঠে না। এ কারণে পাশের জায়গা থেকে বালু তুলতে দেখি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ কাউতলী এলাকার স্থানীয় মেম্বার ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ফজলুল বারী মনছুর জানান, মাঝেমধ্যে স্থানীয় এলাকাবাসী রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর বালু কারবারিরা বেড়িবাঁধের রাস্তা ঠিক করার আশ্বাস দিয়ে পুনরায় চালু করে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে পরশুরাম পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান লিটন এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

অভিযুক্ত একরামুল হক চৌধুরী পিয়াস জানান, আমার কোন বালু ঘাটও নাই, মেশিনও নাই। পরশুরামে বালু মহালের ইজারাদার শাপলা ট্রেডার্স। তাদের মাধ্যমেই বালু উত্তোলন হচ্ছে। আমি বালু সংক্রান্ত কোন কাজে জড়িত নই।

পরশুরাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং চিংনু মারমা বলেন, ইজারার স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বালু তোলা হচ্ছে কিনা তার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, বালুবাহী ট্রাক গ্রামীণ রাস্তায়ও চলার অনুমতি নেই। বেড়িবাঁধের উপর চলাচলের বিষয়টি কেউ জানায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, প্রতিবছর বন্যা এলে বেড়িবাঁধ নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়। পরশুরামে নতুন যোগ দিয়েছি। কাউতলী এলাকায় বেড়িবাঁধের উপর ট্রাক চলাচল করে কিনা খবর নিতে হবে। সত্যতা পেলে ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, অবৈধভাবে বালু তুলতে দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে বালু মহাল ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ ব্যাপারে তথ্য পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে  মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টিএইচ