সরকারের পতনের পর থেকে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে রাতের আঁধারে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির ঘটনা ঘটছে বরিশাল নগরের বাংলাবাজার মসজিদ মোড় থেকে তিনটি প্রধান সড়কের। এছাড়া ব্যাপ্টিস্ট মিশন ও কালু শাহ শাখা সড়ক রয়েছে। ব্যস্ততম সড়কের নিচ দিয়ে চলে গেছে ড্রেন। মোড়ের মাঝ বরাবর সড়কে ড্রেনের উপরে ম্যানহোলের ঢাকনা দেয়া।
ভারী যানবাহন থেকে শুরু করে কোনও ধরনের সমস্যায় যেন পড়তে না হয় এজন্য মোটা রড দিয়ে ঢাকনার ব্যবস্থা করে বরিশাল সিটি করপোরেশন। এরপর থেকে শুরু হয় চুরি। ওই একই স্থানে ছয়বার ঢাকনা দেয়া হলেও তা কোনোভাবে স্থায়ী হচ্ছে না। আর যখনই যানবাহনের চাপ বাড়ে তখনই ওই গর্তে পড়ছে থ্রিহুইলার অনেক যানবাহন। এতে করে যানবাহনে থাকা যাত্রী এবং চালক উভয় দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। কিন্তু বিকল্প কোনও সমাধানও বের করতে পারছে না সিটি করপোরেশন।
সবশেষ কিছুদিন আগে আবারও একই স্থানে ঢাকনা চুরি হওয়ায় সেখানে একটি রড দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত স্থান হিসেবে স্থানীয়রা চিহ্নিত করে রেখেছে। এ সমস্যার জন্য এখন সিটি করপোরেশনকেও দায়ী করা যায় না। কথাগুলো বলছিলেন নগরীর বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা টিপু সুলতান।
চোর চক্র থেকে ঢাকনা রক্ষা করতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শুধু বাংলাবাজার মোড় নয়, নগরী ঘুরে দেখেন বেশির ভাগ ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়েছে। আর ওসব স্থান দিয়ে চলাচলের সময় পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ভুগছেন বেশি। ফজলুল হক এভিনিউয়ের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের বহুতল মার্কেট। আর সেই মার্কেটের নিচে ড্রেন এবং ড্রেনের উপর করা হয়েছে ফুটপাত।
এ কারণে ১০ ফুট পরপর ম্যানহোল তৈরি করে বসানো হয়েছে ঢাকনা। কিন্তু প্রতিদিন রাতে সেই লোহার ঢাকনা চুরি হচ্ছে। চুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গাছের ডাল অথবা কাপড় দিয়ে সতর্কবার্তা টাঙ্গিয়ে দিচ্ছেন বিবেকবান ব্যক্তিরা। কারণ ওই মার্কেটের নিচতলায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা টানতে তাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হচ্ছে।
অনেকে আবার কাঁঠ দিয়ে কোনোভাবে সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছেন। সবশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে চুরি হয় ওই মার্কেটের ঈশ্বরবসুর রোডের বিপরীত পাশে থাকা বাঁশরী ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে ফুটপাতে থাকা লোহার ঢাকনা। এতে করে বিপাকে পড়েছে সেখানকার ব্যবসায়ীরা। সেখানেও গাছের ডাল দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
বাঁশরীর মালিক আপন সাহা বলেন, এখান থেকে ৮টির মত ঢাকনা চুরি হয়েছে। সতর্কবার্তা থাকলে পথচারীদের রক্ষা মেলে। আর যেসব জায়গায় সতর্কবার্তা নেই সেখানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি দুর্ঘটনা ঘটছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, লোহার ঢাকনা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ড্রেনে জমে থাকা গ্যাস ম্যানহোল থেকে যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে বের হয়ে যায়। এ কারণে লোহার ঢাকনা ব্যবহার করা হয়েছে। আমার জানা মতে, একটি স্থানে একই ঢাকনা ৫ থেকে ৭ বারও লাগানো হয়েছে।
এছাড়া ৩০টির অধিক লোহার ঢাকনা চুরির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলী শাখাকে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি। চুরি রোধে এখন সিমেন্টের ঢাকনা ব্যবহারের পরিকল্পনা নিতে হবে। তা না হলে কোনোভাবেই লোহার ঢাকনা চুরি রোধ করা যাবে না। একই ঢাকনা একাধিকবার দিতে গেলে সিটি করপোরেশনের ব্যয়ও বেড়ে যায়।
তাছাড়া লোহায় মরিচা ধরে ভেঙে পড়ে। এমনটাই জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে সদর গার্লস স্কুলসংলগ্ন ড্রেনে সিমেন্টের ঢাকনা ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি জায়গায় সিমেন্টের ঢাকনা ব্যবহার হলে চুরি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, একই ঢাকনা বারবার প্রতিস্থাপনে ব্যয়ও বাড়ছে। এজন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলীরাও চিন্তা করছেন।
টিএইচ