বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post
লোকসানের মুখে চাষিরা

বরেন্দ্র অঞ্চলে তীব্র খরায় আমের ফলন বিপর্যয়

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি 

বরেন্দ্র অঞ্চলে তীব্র খরায় আমের ফলন বিপর্যয়

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে তীব্র খরায় আমের ফলন বিপর্যয়। আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। দেশে আমের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১৩ লাখ টন আম উৎপাদিত হয় রাজশাহীর বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের চার জেলায়। 

আর ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উৎকৃষ্ট জাতের আমের বেশিরভাগই উৎপাদিত হয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আমের আদিভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আমের ফলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম হয়েছে। রাজশাহীর বাগানগুলোতেও এবার আমের ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। 

রোববার (১২ মে) রাজশাহী জেলা প্রশাসন বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণে সভা ডেকেছে। এদিকে পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলায় আম চাষের ব্যাপক সমপ্রসারণ ঘটেছে দুই দশকে। যার অধিকাংশই হাইব্রিড জাতের। রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা বলছেন, ‘জাত আম’ বলে যে কথাটা রাজশাহী অঞ্চলে বহুল প্রচলিত আছে সেসব জাত বলতে মূলত : গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, ন্যাংড়া ও ফজলি আমকেই বুঝায়। এবার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে জাত আমের ফলন বেশ কম হয়েছে। 

চাষিরা বলছেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। অন্যদিকে নওগাঁয় আম্রপালি, বারি-৪সহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের বাগানগুলোতে আমের ভালো ফলন হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ, আমচাষি, বাগান মালিক ও ব্যাপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে দুই সপ্তাহ বিলম্বে বাগানগুলোতে মুকুল আসা শুরু হয়। ফলে আশানুরূপ মুকুল আসেনি। 

পরবর্তীতে আমের গুটি শক্ত ও পুষ্ট হওয়ার জন্য হালকা বৃষ্টির প্রয়োজন থাকলেও এ বছর তা হয়নি। এরপর একটানা প্রচণ্ড খরা। এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ চলেছে অঞ্চলজুড়ে। গত তিন দিনে রাজশাহীতে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও আম ফলনের ওপর এই বৃষ্টি বিশেষ কোনো ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন চাষিরা।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আমচাষি তৌহিদুর রহমান পারভেজ জানান, ‘টানা তাপদাহে আম শুকিয়ে কালো রং ধারণ করছে। পোকা ছিদ্র করায় আম শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। ফলে আমের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় আছি। অনুমোদিত মাত্রার বাইরে ওষুধ ব্যবহার করিনি। শ্রমিকদের আগেই বলেছিলাম শুধু অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ দিয়ে পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তবে শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। আমার বাগানের আম পোকায় প্রায় শেষ করে দিয়েছে। 

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার এমনিতেই আমের মুকুল কম ছিল। তার ওপর মুকুল ফোটার সময়ে ২০ ও ২১ মার্চ সামান্য বৃষ্টি হয়। এতে উপকারের বদলে অপকারই বেশি হয়েছে। অধিকাংশ মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট মুকুল তীব্র খরায় ঝরে পড়েছে। এ কারণে এ বছর আমের ফলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা বলেন, এ বছর মুকুল কম এলেও যে পরিমাণ আম আছে তাতে ফলনে বড় সংকট হবে না।

টিএইচ