তিন দফা দাবিতে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে রোববার (১২ জানুয়ারি) মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা। দাবিগুলো হচ্ছে, হাসিনার ষড়যন্ত্রের স্বীকার পিলখানাসহ সারাদেশে চাকরিচ্যুত সব বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘ ১৬ বছর জেলবন্দি নির্দোষ বিডিআর সদস্যদের জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে। স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিনিধিদেও পাঠানো খবর—
নরসিংদী : নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিডিআর ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এ দাবি জানান। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নরসিংদী জেলা হতে প্রায় ১৭০ জন বিডিআর সদস্যকে শাস্তির আওতায় এনেছে শেখ হাসিনা। তাদের শাস্তি মওকুফ ও চাকরিতে পুনর্বাসন করার দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে উপস্থিত স্বজনদের অভিযোগ, বিগত ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার নীলনকশার অন্যতম অংশ এবং প্রথম গণহত্যা ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড। যার দায় চাপানো হয়েছে নিরপরাধ, নিরীহ বিডিআর সদস্যদের ওপর। যার ফলে পথে বসেছে হাজারো পরিবার। বিডিআর কল্যাণ পরিষদ নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি হাবিলদার আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে চাকরিচ্যুত ও সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বিডিআর কল্যাণ পরিষদ নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক হাবিলদার মনিরুজ্জামান, হাবিলদার আজিজ, সিপাহী মাহবুব হোসেন, রিপন, ইকবাল, মাহমুদুল, বদরুজ্জামান, মোসাদ্দেক ও তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।
বরিশাল : নগরীর সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর বরিশালের ব্যানারে এ মানববন্ধন পালিত হয়। চাকরিচ্যুত হাবিলদার মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতাদের পরোক্ষ মদদে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে এবং সমগ্র বিডিআর এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সাজানো আদালতে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগে বাঁধা প্রদান করা হয়, ফলে আসামিরা ন্যায্য বিচার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চাকরিচ্যুত সিপাহী আতাউর রহমান, নজরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, চাকরিচ্যুত সিপাহী আতিকুর রহমানের বোন নুসরাত জাহান, চাকরিচ্যুত সিপাহী লুৎফর রহমান, চাকরিচ্যুত সিপাহী লিটু দাসের বোন বিচিত্রা দাসসহ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধনে অংশ নেন।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ জেলা শাখার ব্যানারে চাকরিচ্যুত বিডআর সদস্যরা এবং তাদের পরিবারের স্বজনরা এ মানববন্ধন পালন করে। এ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, ডিএডি সাখাওয়াত হোসেন, হাবিলদার গিয়াস উদ্দিন, নায়েক জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিডিআরের সন্তান জেসমিন আক্তারসহ অনেকে।
মানববন্ধনে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও তার দোসরদের চক্রান্তে বিডিআর বিদ্রোহের নাটক সাজানো হয়। সেনা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যার পর নির্দোষ সৈনিকদের চাকরিচ্যুত ও সাজা দিয়ে লোকদেখানো তদন্তের নামে ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নিরাপরাধ যেসব বিডিআর সদস্য জেলবন্দী আছেন তাদের মুক্তিরও দাবি করেন বক্তারা।
বাগেরহাট : বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে জেলায় চাকরিচ্যুত ৯৫ জন বিডিআর সদস্য ও তাদের স্বজনরা অংশ নেন। এতে বক্তব্য দেন, বিডিআর কল্যাণ পরিষদ বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি হাবিলদার জিল্লুর রহমান, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য আছাদুজ্জামান ইমরান, হাবিলদার মো. রিয়াজুল ইসলাম, বিডিআর সদস্য ডিএডি হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আমেনা রহমান প্রমুখ। বাগেরহাটে তিন দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত সদস্য ও তাদের স্বজনরা। জেল খানায় মৃত্যুবরণকারী বিডিআর সদস্য ডিএডি হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আমেনা রহমান বলেন, আমার স্বামী ডিএডি হাবিবুর রহমানের চাকরি ছিল মাত্র ১৮দিন। সেই অবস্থায় তাকে ধরে জেলে দেয়া হয়। ৫ বছর জেল খেটে সে মারা যায়। মূলত রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের কারণেই সে মারা গেছে। সে মারা যাওয়ার পরে আমরা কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। আমার স্বামীর মৃত্যুর বিচার এবং নিয়ম অনুযায়ী সব সরকারি সুযোগ সুবিধা চাই। মানববন্ধন শেষে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের স্বজনরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
যশোর ব্যুরো: প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ যশোরের উদ্যোগে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। বিডিআর কল্যাণ পরিষদ যশোরের সমন্বয়ক ওয়াহিদ খানের নেতৃত্বে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে চাকরিচ্যুত যশোরের ১৬৩ জন বিডিআর সদস্য ও তার পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য দেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য আব্দুর সামাদ, আব্দুল কাদের, মিজানুর রহমান প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তৎকালীন সরকার সংবিধান বহির্ভূত প্রজ্ঞাপন দিয়ে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে পিলখানার ভিতরে এবং পিলখানার বাইরে ইউনিটসমূহের নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করে। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিডিআর কল্যাণ পরিষদের, অর্থ সমন্বয়ক ও চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তা ও ৭৪ দেশপ্রেমিকের স্মরণে বক্তব্য রাখেন। তারা এ ঘটনায় দোষী কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা ১৫ বছর ধরে অবিচারের শিকার। হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারকে মানবেতর জীবনযাপনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিন এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করুন। এ সময় বক্তব্য দেন, জেলা বিডিআর সমন্বয়ক সৈনিক মো. নাজমুল মিয়া, হাবিলদার সিরাজুল ইসলাম, সৈনিক রেহান উদ্দিন, লান্স নায়েক বিপ্লব পণ্ডিত, সিপাহি আবদুল কাদির, হাবিলদার আবদুল লতিফ, হাবিলদার রফিকুল উদ্দিনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম শহরের শাপলা চত্বরের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বিদ্রোহের নামে প্রহসনের বিচারের নামে ১৮ হাজার ৫১৯ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। প্রায় ৮ শতাধিক বিডিআর সদস্য কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অবিলম্বে তাদের নিঃশর্তে মুক্তি ও চাকরিতে পূর্নবাহলের দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রামের সংগঠক আলমগীর হোসেন। এসময় বক্তব্য দেন আন্দোলনের মুখপাত্র বিডিআর সদস্য মো. আব্দুল আখের, বিডিআর শিশুসন্তান মিম, মাহি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য সিরাজুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও বিডিআর সদস্যের পরিবারের সদস্যরা। আন্দোলনের মুখপাত্র বিডিআর মো. আব্দুল আখের আলী বলেন, আমাদের অনেকে নিরপরাধ থেকেও চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে। এখনো প্রায় ৮ শতাধিক বিডিআর কারাগারে আছেন। তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক।
টিএইচ