সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

বিলীনের ২২ বছরেও নির্মাণ হয়নি ফেনী নদীর রেগুলেটর সেতু

ফেনী প্রতিনিধি

বিলীনের ২২ বছরেও নির্মাণ হয়নি ফেনী নদীর রেগুলেটর সেতু

ফেনী নদীর রেগুলেটর সেতুটি বিলীনের পর পুনর্নির্মিত না হওয়ায় দুই উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে জেলার সোনাগাজী উপজেলার কাজিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেতু অভাবে একটি দড়িটানা নৌকায় চড়ে প্রতিদিন ওই নদীটি পাড়ি দিয়ে এপাড়-ওপাড় যাতায়াত করছে দুই উপজেলার শতশত মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করতে ১৯৬১-৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সোনাগাজী উপজেলার কাজিরহাট এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ফেনী নদীর ওপর ২০ গেটবিশিষ্ট একটি রেগুলেটর সেতু নির্মাণ করে। যে সেতুটি (পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে)। 

এরপর সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের দায়িত্ব পায় ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তারা সেটি রক্ষণাবেক্ষণের করলেও স্বাধীনতার পর ওয়াপদাকে বাদ দিয়ে এই মন্ত্রণালয়কে পানি উন্নয়ন বোর্ড করা হয়। 

তখন রাষ্ট্রের খরচ কমাতে জনবল ও মেরামতের টাকা অর্ধেকে নিয়ে আসে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে ২০০২ সালে জোয়ারের পানিতে নদীতে বিলীন হয়ে যায় সেতুটি। 

স্থানীয়রা জানান, এরপর থেকে সেতু না থাকায় গত ২২ বছর ধরে ২০০ মিটার দীর্ঘ এই নদীপথে প্রতিদিন শতশত মানুষের যাতায়াত। ফেনীর সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষের ওই নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা একটিমাত্র নৌকা। ফলে প্রতিনিয়ত  চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার এসব মানুষকে।

সোনাগাজীর যুবলীগ নেতা মাঈন উদ্দিন লিটন ও ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম টিপন বলেন, ২০০২ সালে রেগুলেটরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সেতুর একপাশে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার কাজীরহাট, দারোগারহাট, কেরামতিয়া বাজার, জমাদারবাজার, চান মিয়ার দোকান, ওলামাবাজার।

অন্যপাশে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরহাজারী, চরপার্বতী, মৌলভীবাজার, কদমতলা বসুরহাট, চৌধুরী হাটসহ দশটি বাজার। কিন্তু এ দুই উপজেলার একমাত্র সংযোগ সেতুটি না থাকায় এসব এলাকার হাজারো মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা কষ্টে নদীটি পড়ি দিতে হয় নৌকায়। 

নদী পাড়ে দেখা হয়, দুই উপজেলার আছিয়া বেগম ও রাহেলা আক্তার নামে দুই বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন আমাদের কয়েকবার নৌকায় আসা যাওয়া করতে হয়। এতে আমাদের ৬০ থেকে ৯০ টাকা খরচের পাশাপাশি সময় অপচয় হয়। 

এছাড়া বর্ষার সময় ঝড়-বৃষ্টি হলে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় নদীর পারাপার হওয়া যায় না। তাছাড়া এশার নামাজের পর নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে রাতের বেলায় কেউ অসুস্থ হলেও চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ চিকিৎসকের সহায়তা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবা পেতে এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

এদিকে খোদ সেতুমন্ত্রীর বাড়ির পাশের এলাকা হওয়া সত্ত্বেও ২২ বছরেও সেতু না পেয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

সোনাগাজীর কাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী গিয়াস উদ্দিন মামুন জানান, উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এটি। রেগুলেটর সেতুটি না থাকায় প্রতিদিন নৌকা দিয়ে নদী পার হচ্ছে মানুষ। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দুই পারের মানুষকেই। রেগুলেটর থাকাকালে এটির ওপর দিয়ে ছোটখাট যানবাহন চলাচল করত। অতিদ্রুত এখানে সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির সোনাগাজী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন, নতুন সেতু নির্মাণে জেলা এলজিইডি প্রকৌশল অধিদপ্তরে সার্ভে রিপোর্ট পাঠানো হলেও সেতুর দৈর্ঘ্য নিয়ে জটিলতায় ফাইলটির অগ্রগতি হয়নি। 

তার দাবি, নতুন সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ৭৫ মিটার পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু এই সেতুর ক্ষেত্রে প্রয়োজন ১২০ মিটার। অনুমোদিত আয়তনের বেশি হওয়ায় আমাদের কাছে যে প্রকল্প রয়েছে সেই প্রকল্পে সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব নয়। ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্য নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এজন্য নোয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগ এ সেতুটি নির্মাণে নতুন করে উদ্যেগ গ্রহণ করেছে।

নোয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাখাওয়াত আজিজ ভূঞা বলেন, সেতুটি দ্রুত নির্মাণে ইতোমধ্যে সার্ভে রিপোর্ট তৈরি করে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কোম্পানীগঞ্জ থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত সড়কটি এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেতু নির্মাণপ্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে সহজ হবে।

সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, দুই পারের মানুষের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত সেতুটি নির্মাণের জন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অবহিত করেছি। উনার নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যে নোয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগ এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।

টিএইচ