সাতক্ষীরার পশ্চিম সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার জেলে বাওয়ালিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন নৌকা তৈরি, পুরানো নৌকা ও ট্রলার মেরামতসহ করছেন রঙের কাজও। মেরামত করা হচ্ছে জাল ও আটন।
তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে তারা জীবিকার সন্ধানে পুনরায় সুন্দরবনে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে সেই আনন্দে জেলে বাওয়ালি ও ট্রলারচালকদের মধ্যে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।
বুড়িগেয়ালিনীর জেলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারে ৮ সদস্য। পরিবারের আমিই একমাত্র উপার্জক। তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ থাকায় খুব কষ্টে দিন কেটেছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই নৌকা সারাই করছি। সুন্দরবনে মাছ ধরতে পারবো খুব ভালো লাগছে।
মুন্সিগঞ্জের জেলে আসাদুজ্জামান গাজী বলেন, তার পরিবারের ৫ সদস্যের সংসারটা চলে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরেই। এলাকায় অন্য কোনো কাজ না থাকায় বন্ধের দিনগুলোতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা আর এলাকার লোকজনের কাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। মাছ কাঁকড়া ধরে এসব ঋণ পরিশোধ করবেন বলে জানান।
ভামিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম গাজী বলেন, ৫০ বছর ধরে সুন্দরবনের উপর জীবিকা নির্বাহ করে আচ্ছেন। আগে তিনি তার বাবার সঙ্গে যেতেন। এখন অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে যান। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল তার জীবন-জীবিকা।
সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম জানান, পর্যটকের ওপর নির্ভর করে সুন্দরবন। সাতক্ষীরা রেঞ্জের প্রায় ৫শ ট্রলার চলে। ১ জুন থেকে আগস্টের ৩১ তারিখ পর্যন্ত মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্যটকদেরও প্রবেশ নিষেধ থাকে। এ সময় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে বাওয়ালিরা ধার দেনা করে খুব কষ্টে সংসার চালায়।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিসের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা নূরুল আলম জানান, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, জীবজন্তু ও মাছের প্রজনন বাড়ানোর জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে ৯২ দিনের জন্য নদ-নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশেরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে নৌকা নিবন্ধন (বিএলসি) হয়েছে ২ হাজার ৮৩৯টি। সাধারণত একটি নৌকায় ৫-৬ জন করে মাছ কিংবা কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, তিন মাস পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে ও বাওয়ালিদের সুন্দরবনে প্রবেশের পাস (অনুমতি) দেয়া হয়েছে।
টিএইচ