বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

ভারতীয় মাদক ও চিনি চোরাচালানের নিরাপদ সড়ক কোম্পানীগঞ্জ

কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি

ভারতীয় মাদক ও চিনি চোরাচালানের নিরাপদ সড়ক কোম্পানীগঞ্জ

অতিতের চেয়েও বেশি মাদক ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় চিনি প্রবেশ করছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে। এসব মাদক ও চিনি বাজারজাতে নিরাপদ রুট হিসেবে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জকে বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। 

মাঝে মাঝে পুলিশের জালে মাদকের চালান আটক হলেও শুল্ক কর ফাঁকি দেয়া চিনি বাজারজাতে চোরাকারবারিদের কোনো প্রকার বেগ পোহাতে হয় না। গত এক বছরে উত্তর সিলেটের এই উপজেলাটি যেন চোরাকারবারিদের দখলে রয়ে গেছে। 

সামপ্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রতিরোধে পুলিশের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ফলে মাদক ও চিনি আটকে ঢিলেঢালা অপারেশনের সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে ক্ষুদ্র এ জনপদের মাদক ও ভারতীয় চিনি চোরাকারবারিরা। ফলে সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় পূর্বের চেয়ে অধিক বেশী ভারতীয় মরণনাশক মাদক আসছে। 

শুল্ক ফাঁকি দেয়া এসব মাদক ও চিনি নিরাপদেই পৌঁছে যাচ্ছে সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায়। অধিকাংশ চালান আসে উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের কালাইরাগ, বরমসিদ্দিপুর, মাঝেরগাও ও তুরং সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে। আর এসব মাদক কামালবস্তি লাকিরবাসা হয়ে হাওর পথ মাড়িয়ে তেলিখাল, খাগাইল ও সালুটিকর পয়েন্ট ব্যবহার করে বিভাগের বিভিন্ন জেলা কিংবা বিভাগের বাইরেও চলে যাচ্ছে।

সূত্র প্রাপ্ত, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের কথিত লাইনম্যান/সোর্স খ্যাত ব্যক্তিদের লাইন খরচ দিলেই মাদক ও চিনি চোরাচালানের পথ যেন প্রসস্ত হয়ে যায়।

সীমান্তের ১২৫৪ থেকে ১২৫৫ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার এলাকায় বিজিবির কথিত সোর্স ও লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্থানীয় দুজন। ১২৫৪ এবং ১২৫৫ পিলারের মাঝখানে পানি নিষ্কাশনের পাইপ এবং একটি কালভার্টের নীচ দিয়ে আসছে এসব মাদক ও চিনি। 

সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত পেরিয়ে মাদকের ছোট ছোট চালান আসার সময় সুযোগ বুঝে সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যদের দিয়ে আটক করায় তাদের সোর্স। ছোট মাদকের চালান আটক করতে ব্যস্ত বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদকের বড় চালানগুলো নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন ওই দুজন সোর্স। 

অন্যদিকে ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন এলাকার ভোলাগঞ্জ, নারাইনপুর, চিকাডহর, ছনবাড়ী এবং ছাতক উপজেলার গাংপাড় নোয়াকোট, নিজগাঁও রতনপুর সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে আসা ভারতীয় মাদকের চালান ভোলাগঞ্জ ১০নং পয়েন্টের একাধিক গোপন স্থানে এসে মজুদ হয়। এসব মাদক ছদ্মবেশী পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস কিংবা পিকআপে চরিয়ে সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। কখনো কখনো ঢাকাগামী বাসগুলোকে ব্যবহার করেও মাদকের চালান সিলেটের চলে যাচ্ছে। 

গত মাসে ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়িতে দায়িত্বরত এএসআই কাঞ্চন চক্রবর্তী ২৪২৯ বোতল ভারতীয় মদ আটক করা ছাড়া গত এক বছরে পুলিশ কিংবা বিজিবির বড় কোনো মাদকের চালান আটকের সফলতা নেই। নতুন ওসি দায়িত্ব গ্রহণের পরে ঢাকাগামী একটি বাস থেকে ৯২ বোতল ভারতীয় মদসহ দুটি চালান আটকের তথ্য রয়েছে। 

শুল্ক ফাঁকি দেয়া ভারতীয় চিনি আটক করে বিজিবি ও পুলিশ গত এক বছরে কয়েকটি মামলায় একাধিক চোরাকারবারির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করলেও এবার ভিন্ন কৌশলে নতুন রুটে চিনি প্রবেশ করছে সীমান্তবর্তী এ উপজেলায়। নতুন রুট হিসেবে চোরাকারবারিদের নিরাপদ পয়েন্ট ছনবাড়ী, রতনপুর ও নিজগাঁও এলাকা। এসব এলাকা থেকে চিনিবাহী মোটরসাইকেল প্রতিদিনই আসছে কোম্পানীগঞ্জে। 

শাহ আরফিন বাজার হয়ে নভাগি, বটেরতল সড়ক ব্যবহার করে পাড়ুয়া ও এর আশপাশের নিরাপদ স্থানে মজুদ হয় এসব চিনি। সেখান থেকে এসব চিনি সিলেটের বিভিন্ন আরতদারের গুদামে চলে যায়। গত কয়েকদিন যাবত বরমসিদ্দিপুর দিয়েও আসছে মাদক ও চিনির চালান। এছাড়াও গত কিছুদিন পূর্বে চোরাকারবারিরা ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর সংলগ্ন ভারতের কাটাতারের বেড়া কেটে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ব্যাটারির বিশাল একটি চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

বিশেষ আরেকটি সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় মাদক ও চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনতে প্রদেয় টাকার চেয়েও মূল্যবান সোনার বিস্কিট বিনিময় অধিক লাভজনক এবং নিরাপদ। তাই মাদক ও চিনি চোরাচালানে সোনার বিস্কিট বিনিময়ের তথ্যটি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা কঠোর দায়িত্ব পালন করলে সোনা চোরাচালান আটক করা যেতে পারে। 

এ মাসের ৯ তারিখ সিলেট ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দুবাই থেকে আসা ৪ যাত্রীর কাছ থেকে ৩৪ কেজি সোনা আটক হয়। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ভারতীয় মাদক ও চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালান অর্থের বিকল্প হিসেবে এসব সোনার বিস্কিট প্রদানের বিষয়টি অমূলক নয়।

এ বছর মাদক আইনে ৪৩টি এবং ভারতীয় চোরাই পথে আমদানিকৃত চিনির চালান আটক করে ১৬টি মামলা করেন কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ। তারপরও বন্ধ হয়নি মাদক ও ভারতীয় চিনি চোরাচালান। 

তবে এ বছরের শেষ দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন গোলাম দস্তগীর। নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরপরই আসন্ন নির্বাচনীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভারতীয় মাদক এবং চিনি চোরাচালান রুখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তার ফাক দিয়ে কি করে মাদক ও চিনি প্রবেশ করছে এমন প্রশ্ন করলে কালাইরাগ বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রতিবেদক ফোন দিলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছি বলেই ফোন কলের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মাদক ও চিনি চোরাচালান আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর বলেন, আমি যোগদানের পরে দুটি মদের চালান আটক করেছি। তাছাড়া চিনি চোরাচালান আটকে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।

টিএইচ