চট্টগ্রাম চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে। রমজানে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর রমজান আসলে ভোগ্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে। রমজান উপলক্ষে ৪টি ভোগ্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে সরকার এবং চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য নিয়ে জাহাজ আসছে।
এতে রমজান মাসে কোন প্রকার ভোগ্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি হবেনা এবং দাম থাকবে নাগালের মধ্যে। তবে এত সব খবরে মুখে হাসি নেই ভোক্তার।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মো. এরশাদ নামে ভোক্তা বলেন, তার ছয়জনের সংসার। ভাড়া বাসায় থাকেন। যে বেতনে চাকরি করেন। রমজানে একটি খেলে আরেকটি খাওয়া সম্ভব হবেনা। ভোগ্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। পণ্যের শুল্ক কমানোতে কোটিপতি থেকে কোটি পতি হবেন ব্যবসায়ীরা। সরকার যতই চেষ্টা করুক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। সুতারাং বন্দরে জাহাজ আসা আর শুল্ক কমানোতে আমাদের কোনো লাভ নেই।
শুল্ক কমানোর মধ্যে চিনি কেজিতে ৭৫ পয়সা, সয়াবিন ও পামওয়েল কেজিতে ৭-৮ টাকা, চাল কেজিতে ২৩ টাকা ও খেজুর কার্টনে ৩৩ টাকা কমবে। রমজানে ভোক্তার জন্য ভোগ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাকিতে পণ্য আমদানি করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাবেন আমদানিকারকরা। তবে এরপরও ডলার সংকটে এলসি খুলতে পারছেনা আমদানিকারকরা। যার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধা কাজে লাগাতে পারছেনা আমদানিকারকরা। চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পণ্যের মজুত যেমন আছে পাইপ লাইনে আছে আরও জাহাজ। এরপরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বাজার।
এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ভোগ্যপণ্য ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকার সব পদক্ষেপ আগে থেকে নেয়া হয়েছে। আমদানি স্বাভাবিক রাখতে এলসি খুলতে কোনো অসুবিধা না হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কঠিন হতে হবে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ‘রমজানকে ঘিরে পর্যাপ্ত পণ্য এসেছে দেশে। এখনো প্রায় এক মাস বাকি আছে। ভোগ্যপণ্য বোঝাই বেশ কিছু জাহাজ আছে বন্দরে। আসছে আরও এক ডজনের বেশি জাহাজ। আশা করছি, এবারের রমজানে নিয়ন্ত্রণে থাকবে বাজার। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, রমজানে ভোগ্যপণ্য নিয়ে কোনো কারসাজি করার সুযোগ দেবোনা। নিয়মিত বাজর মনিটরিং করা হবে।
অপরদিকে বন্দরে অনেক জাহাজকে শিপিং ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় জাহাজগুলোর পণ্য খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার মুশফিকুর রহমান বলেন, শুল্ক কমানো খবরে অনেক সময় পণ্য খালাস করেন না। এতে নিয়ম মোতাবেক ডেমারেজ গুণতে হয়। এইটা ব্যবসায়ীদের দাম পাওয়ার কৌশল। ডলার সংকটে আমদানিকারকদের সমস্যা পড়তে হচ্ছে। এত সবকিছুর পরে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে ভোক্তা কোনো সুফল ভোগ করতে পারবে না বলে দাবি ভোক্তা পরিষদের।
ভোগ্যপণ্য বোঝাই একের পর এক জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ৭ ফেব্রুয়ারি চিনি তৈরির ৫৮ হাজার ৯০০ টন কাঁচামাল নিয়ে বন্দরে নোঙর করেছে এমভি কনকার নামের জাহাজ। ২৯ হাজার ৯০০ টন ক্রুড সয়াবিন নিয়ে ৩০ জানুয়ারি এসেছে একটি জাহাজ। গম ও ডাল নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি এসেছে এমভি মালাক। ১০ হাজার টন সয়াবিন নিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি এসেছে এমভি ফ্যালকন ম্যাজিস্ট্রেক। এ ছাড়া প্রায় ৪ লাখ টন গমবোঝাই আরও সাতটি জাহাজ নোঙর করে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ ছাড়া ৬০ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন নিয়ে বন্দরে নোঙর করার কথা এমভি বাল্ক কেস্টর নামে জাহাজের। সাড়ে ৬০ হাজার টন চিনি তৈরির কাঁচামাল নিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি আসার কথা এমভি ফেডারেল কুডসের। ৫৮ হাজার টন গম নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি নোঙর করার কথা আরেকটি জাহাজের।
টিএইচ