শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

মহেশপুরে হুমকির মুখে ক্ষুধার্ত কালো মুখো হনুমান

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

মহেশপুরে হুমকির মুখে ক্ষুধার্ত কালো মুখো হনুমান

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রাম। এই গ্রামের বনাঞ্চলে রয়েছে প্রায় দুই শতাধীক কালোমুখো বিরল প্রজাতির হনুমান। এই গ্রামের মানুষের সঙ্গে এদের রয়েছে সখ্যতা। ঠিক কতদিন ধরে হনুমানগুলো এখানে বসবাস করে তা এই গ্রামের মানুষের জানাও নেই।

তবে এলাকার প্রবীণরা মনে করেন ব্রিটিশ আমল থেকেই এরা এই গ্রামে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও মধ্যবয়সী হনুমান রয়েছে। যদিও এর আগে এখানে হনুমানের সংখ্যা কম ছিল। দিন যত যাচ্ছে এখানে হনুমানের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। 

এরা দিনের বেলায় একসঙ্গে কিংবা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে শ্যামকুড় মাঠপাড়া, স্বরুপপুর ও শ্রীনাথপুর গ্রামের মাঠে মাঠে খাবারের সন্ধান ঘুরে বেড়ালেও রাত হলে তারা আবারও ফিরে আসে তাদের ভবনগর গ্রামে। তবে খাবারের সন্ধানে ফসলের ক্ষতিও করে এসব হনুমানগুলো। কেউ কেউ বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখলেও আবার কেউ কেউ হনুমাদের পিটিয়ে আহত পর্যন্ত করে থাকে।

বন অধিদপ্তরের একটি সূত্রে জানাগেছে, ২০২০ সাল থেকে বন অধিদপ্তরের সিসিএফ আমির হোসেন চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে প্রতিদিন এসব হনুমানদের খাবারের জন্য ১৬ কেজি কলা, ২ কেজি বাদাম, ৫০ পিচ পাউরুটি ও সবজি ২ কেজি বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এসব খাবার হনুমানদের খুঁজে খুজে দিয়ে বেড়ান ভবনগর গ্রামের নাজমুল হাসান নামের এক যুবক। নাজমুলের ডাক চিৎকার শুনলেই কালোমুখো হনুমানগুলো লাফাতে লাফাতে ছুটে আসে তার কাছে। তারা নাজমুলের হাত থেকে খাবার খায় অনেকটাই নির্ভয়ে।

ভবনগর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে সামান্য পরিমাণের ২০০টি হনুমানের খাবার দেয়া হয় তা দিয়ে তাদের ক্ষুধা মেটে না। সব সময়ই ক্ষুধায় কাতর থাকে হনুমানগুলো। তাছাড়া আগের তুলনায় হনুমান বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য সংকট আরো বেশি দেখা দিয়েছে। যে কারণে এদের রক্ষায় ও অভয়ারণ্য তৈরির ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

হনুমান প্রেমী ও হনুমানদের দেখভালকারী নাজমুল হাসান জানান, বন অধিদপ্তর থেকে যে পরিমাণের খাবার দেয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। যে কারনে খাবারের সন্ধানে এরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে মানুষের ফসল নষ্ট করছে। এছাড়াও এলাকার বনজঙ্গল কমে যাওয়ায় এরা লোকালয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এদের নিরাপদ থাকার জায়গা ও পরিমাণমত খাবার জরুরি হয়ে পরেছে।

ভবনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিকাইল হোসেন জানান, দিন দিন এলাকায় বড় বড় গাছগুলো কমে যাওয়ার কারণে তাদের থাকার সমস্য হচ্ছে। আবার তাদের যে পরিমাণের খাবার দেয়া হচ্ছে তাও সামান্য। তিনি আরো জানান, হনুমানগুলো খাবারের কারণেই লোকালয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের ফসলসহ সবত ঘরেরও ক্ষতি করছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমাদের এলাকার বড় বড় গাছগুলো রক্ষা করতে হবে আগে। এগুলো নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের এলাকার হনুমানগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিবুর রহমান জানান, হনুমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের মারা ও নিধন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই প্রাণিটি মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। অন্যপ্রাণী থেকে এদের রোগ বালায়ও কম হয়। এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, এসব হনুমানের উপর আমরা রিপোর্ট করিয়ে খাবারের বরাদ্দ করা হয়েছিলো। এরা সব সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যার কারণে কোন সময় তারা বেশী থাকে আবার কোন সময় কম থাকে। 

তিনি আরো জানান, হনুমান এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে জন্য অভয়ারণ্যে তৈরির খুবই প্রয়োজন। মহেশপুর ইউএনও ইয়াসমিন মনিরা জানান, হনুমান যে ভবনগর গ্রামে বসবাস করে বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। আমি বিষয়টি জেনে কি করা যায় দেখবো।

টিএইচ