মনোহরদীতে ভিন্ন কায়দায় চলছে মাদকদ্রব্য সেবন এবং বিক্রি। নেশায় বিভোর কিশোর ও যুবসমাজ, ধরা ছোঁয়ার বাইরে লাঘব বোয়ালরা। কোনো কোনো সময় মাদকের সাথে জড়িত কিছু চুনোপুঁটি আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হলেও অধরাই থেকে যাচ্ছে গডফাদাররা।
এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা এর মধ্যে মাদক সেবন এবং ব্যবসায় চালাকচর ইউনিয়নের চালাকচর বাজার অন্যতম। এলাকার মানুষের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, বর্তমানে মাদক বিক্রেতারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গ্রামের আনাচে-কানাচে অবাধে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চললেও বাধা দেয়ার কেউ নেই।
এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বাধা দিতে গেলেও অনেকেই অপমান অপদস্তে শিকার হতে হয়। মাদক ব্যবসায়ীরা নেপথ্যে থেকে লোক চক্ষুর আড়ালে তাদের নিয়োজিত চুনোপুঁটি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। পুলিশের অভিযানে আটকও হচ্ছে চুনোপুঁটিরা।
গত কয়েকদিন হলো মনোহরদী পৌর বাজারের ব্যবসায়ী শীতল সাহাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকের বিশাল চালানসহ নরসিংদী ডিবি পুলিশের অভিযানে ধরা পরে। মনোহরদী থানা পুলিশও অভিযান চালিয়ে গাঁজা-মদসহ অন্য নেশাজাতীয় দ্রব্য উদ্ধার করে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হলেও মনোহরদীতে বন্ধ হচ্ছে না মাদক বাণিজ্য। যার ফলে স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা সন্তানদের নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
কিছু মাদকসেবীদের অত্যাচারের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। যার কারণে মাদকের সাথে জড়িতরা হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া। মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে সভা-সেমিনারসহ উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় লোকজনের মতে, মাদক কারবারিদের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলো হলো— চালাকচর বাজারের বক্কিলার মোড়, গার্লস স্কুলের মোড়, পীরপুর মোড়, মীরজাপুর মোড়, সাগরদী টু হেতেমদী বাইপাস রোড, মাস্টার বাড়ি ব্রিজ, ড্রেনের ঘাট ব্রিজ, সাগরদী বাজার, খিদিরপুরের মনতলা বাজার, হেতেমদী মোড়, হাতিরদিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাতিরদিয়া মুরগি বাজার, হাতিরদিয়া ব্রিজ, লেবুতলার তারাকান্দীর ব্রিজ, ড্রেনেরঘাট এবং পাইকান ব্রিজ এলাকায় মাদকদ্রব্য সেবন ও ব্যবসা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। এসব এলাকায় পুলিশি অভিযান পরিচালনা করলেও চুনোপুঁটি ছাড়া তাদের কোনো গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে এখনো সক্ষম হয়নি।
এলাকাবাসী মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন খুবই জরুরি। লোকমুখে শুনা যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া বাজার হয়ে মনোহরদী উপজেলার বড়ছাপা, শেখের বাজার টু চালাকচর বাজার বক্কিলার মোড় হয়ে পশ্চিম চালাকচর লেবুতলার নোয়াকান্দী তারাকান্দী ব্রিজ হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর ওইপাড় কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব, বরজাপুর মোড়, গিয়াসপুর, আমরাইদ পর্যন্ত দীর্ঘ এই রোডটি মাদক কারবারিদের জন্য একটি নিরাপদ রোড।
এদিকে মনোহরদী টু মটখলা প্রস্তাবিত চারলেন নতুন বাইপাস রোডের সাগরদী থেকে হেতেমদী মোড় পর্যন্ত রাস্তায় মাদকসেবীদের বিচরণ এখন দৃশ্যমান। নতুন এ বাইপাস রোডে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় এ রাস্তায় মাদকসেবীদের মাদক সেবন এবং মাদক বিক্রিতে এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে মাদকসেবী ও মাদক কারবারীদের নিরাপদ বিচরণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এখানে এখন মাদকসেবীদের যাতায়াত নিয়মিত।
মনে হচ্ছে এই রাস্তা টুকু তাদের জন্য স্বর্গরাজ্য। এখানে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরপরই শুরু হয় মাদকসেবীদের বিচরণ। তাদের নির্লজ্ব বেহায়াপনা নোংরামী চোখে পরার মতো যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। মাদক সেবনকারী, বিক্রেতা এবং কিছু জুয়াড়িদের কারণে সাধারণ মানুষ এ রাস্তায় বিনোদন ও চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়। প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর দাবি মাদক বন্ধ করতে মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তাদের গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। যুবসমাজকে বাঁচাতে এবং আমাদের সমাজকে মাদকমুক্ত করতে আনাচে-কানাচে অভিযানের পাশাপাশি মাদক বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অতিব জরুরি।
মনোহরদী থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদ উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে মাদকদ্রব্যসহ অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণও করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত আছে। মাদকের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস নেই, এটা আমার সাফ কথা। মাদকের সাথে যারাই জড়িত আছে সে যেই হোক না কেন তাদের খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
টিএইচ