সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

মির্জাগঞ্জে মুঘল আমলের অন্যতম নিদর্শন মিঞা বাড়ির শাহী মসজিদ

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 

মির্জাগঞ্জে মুঘল আমলের অন্যতম নিদর্শন মিঞা বাড়ির শাহী মসজিদ

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মুঘল আমলের এক অন্যতম নিদর্শন উপজেলার রানীপুর গ্রামে অবস্থিত ৩শ বছরের পুরনো মিঞা বাড়ি শাহী জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে এলাকায় ধীরে ধীরে ‘মিঞা বাড়ির মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে মসজিদটি। 

তবে সঠিক তদারকি, সংস্কার ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এর সৌন্দর্য্য। অযত্নে অবহেলায় ঝোপঝাড়ের মধ্যে পড়ে থাকা মোগল আমলের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাচীন ও অন্যতম নিদর্শন এ শাহী মসজিদটি। উপজেলা সদর সুবিদখালী থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে রানীপুর মিঞা বাড়ীর অবস্থান। রানীপুর মহাসড়ক থেকে মসজিদ যেতে মাত্র ৫-১০ মিনিটের পথে রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ, পথিমধ্যেই সাঁকো পার হয়ে যেতে মসজিদটি। 

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, এই মিয়া বাড়ি ছিল মুঘল আমলের শিবন খার জমিদারির একাংশ। রানীপুর মিয়াবাড়ির জমিদার ছিলেন আরমান আলী শাহী। তিনি মজিদটি নির্মাণ করেন এবং তার নাম অনুসারে এই মজিদের নাম রাখেন শাহী জামে মসজিদ। কিন্তু বর্তমানে জমিদার আরমান আলীর বংশধরদের নানাবিধ সমস্যার কারণে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মসজিদটি এখন সৌন্দর্য্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এক গম্বুজ বিশিষ্ট মিঞা বাড়ির আরমান আলী জামে মসজিদটি চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত। মসজিদটির মূল ভবন চারপাশে ২০০ বর্গফুট বিশিষ্ট। উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। চার কোনায় ৪টি মিনার, মাঝে ৮টি ছোট মিনার ও মাঝখানে বড় একটি মিনার রয়েছে। মসজিদের সামনের দিকে ও উত্তর পাশে একটি করে দরজা রয়েছে। একতলা মসজিদটি নিখুঁত কারুকার্যবেষ্টিত। মসজিদের ভেতরে ৩০ থেকে ৪০ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। 

মসজিদের ভেতরের ও বাইরের পলেস্তরা খসে পড়ে চুন-সুরকি বেড়িয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়ালে শেওলা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে মসজিদের সৌন্দর্য্য। মসজিদের বাহির দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত (সাদা রংঙের ফুল আঁকা) মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। মসজিদের পূর্বপাশে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে একটি ঘাট বাঁধানো বড় দীঘি রয়েছে। মুসল্লিরা এখানে ওজু ও গোসল করেন। সুপরিকল্পিতভাবে মসজিদটি নির্মিত হলেও সঠিক তদারকির অভাবে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে মসজিদটি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়কারী মুসুল্লী মো. হাবিবুর রহমান জানান, মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করলে আরও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। একযুগ আগে একবার সংস্কার করা হয়েছিলো। তা একালের ইট-বালি ও সিমেন্টের সঙ্গে মিলে না। এর পাশেই রয়েছে দুটি পুরানো বাড়ির ধংসাবশেষ। পুরাতন এ বাড়ি দুইটি জংগলে ঢাকা পড়েছে। এখানে আসার রাস্তাটাও ভালো না। তাই দর্শনার্থীরাও আসতে পারেন না। বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ইসলামি স্থাপত্যশিল্প হিসেবে টিকে থাকবে বহুদিন। 

মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ বলেন, ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা শৈল্পিক স্থাপনাজুড়ে এ মসজিদটিতে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। মসজিদের দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তরা ধসে পড়ছে। শুক্রবার জুম্মা এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই এই মসজিদটি দেখতে আসেন। 

রোজার মাসে এখানে রোজাদারদের জন্য ইফতারির সুব্যবস্থা থাকে। মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরনো নকশা অনুক্ষন্ন রেখে সংস্কার প্রয়োজন। প্রাচীন এই স্থাপনার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই মসজিদটির সংস্কারের দাবি জানাই।

মির্জাগঞ্জ ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পুরোনো যেকোনো কিছু আমাদের কাছে ঐতিহ্য বহন করে। প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। খোঁজ-খবর নিয়ে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

টিএইচ