বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

মোবাইল অ্যাপস ‘নিরাময়’ হাতের মুঠোই স্বাস্থ্যসেবা

হরিণাকুুণ্ডু (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি 

মোবাইল অ্যাপস ‘নিরাময়’ হাতের মুঠোই স্বাস্থ্যসেবা

অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়া দিছে বাপ-মা। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। বছর ঘুরতেই গর্ভবতী হয়ে পড়ি। পড়াশোনা বেশি করিনি। আমি তখন কিছুই জানতাম না, বুঝতামও না। পরে গর্ভের বাচ্চা প্রসবের সময় দেখা দিলো জটিলতা। সেদিন ছিল শুক্রবার। 

সন্ধ্যাবেলা ব্যথা শুরু হলো। রক্তে বিছানা ভেসে যাচ্ছিল। তখন মনে হচ্ছিল আমি হয়তো মরেই যাবো। আমেনা দাদি যখন জানালেন আমার অবস্থা ভালো না তখন বাপ-মা কোনোমতে একটি ভ্যানে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেইখানে আমার কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে সন্তান। 

একনাগাড়ে গর্ভকালীন সময়ে নিজের জীবনের কষ্টের কথাগুলো বলে চলেছিলেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নিভৃত এক পল্লীর তাসলিমা খাতুন নামে এক নারী। তার বয়স এখন ২৫। তিন সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে এখন সুখেই চলছে তার সংসার। 

নারীর স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তার এমন বক্তব্য শুনে জনগণের হাতের মুঠোই স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নেন ইউএনও সুস্মিতা সাহা। পরে তিনি তৈরি করেন স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপস ‘নিরাময়’। তাসলিমা জানান, তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলেটা গ্রামের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। তাকে যখন স্কুলে দেন তখন জন্মসনদ প্রয়োজন হয়নি। এখন ছোট ছেলেটাকে ভর্তি করতে গেলে হেডমাস্টার জন্মনিবন্ধন নিয়ে যেতে বলেছেন।

তাসলিমা বলেন, এই জিনিস তো আমাগোরে লাগে নাই। পোলা মাইয়ারে স্কুলে দেয়ার সময়ও লাগে নাই। পরে একদিন এক স্বাস্থ্য আপা আইসা আমার মোবাইলটা হাতে নিয়া ‘নিরাময় অ্যাপ’ না কী যেন একটা ডাউনলোড কইরা দিছে। সেখানে নাকি রেজিস্ট্রেশনও করছে। 

কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটাও বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। পরদিনই বাড়িতে চৌকিদার আইসা পোলা আর আমাগোর নাম ঠিকানা নিয়া গেল। পরে ফোনে জানাইলো ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়া যেতে। এখন আমি নিজেই ‘নিরাময়’ এর মাধ্যমে সেবা পাচ্ছি। গল্পটা তাসলিমা নামের একজন নারীর জীবনের হলেও এই উপজেলার প্রেক্ষাপটে এটি চিরাচরিত গল্প।

উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে ‘নিরাময় অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে। স্মার্ট মোবাইলের প্লে স্টোর থেকে এ পর্যন্ত অ্যাপসটি ডাউনলোড করেছেন পাঁচ শতাধিক নারী। নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন ৪৮৭ জন প্রসূতি মা। এ ছাড়া এই অ্যাপসে ইপিআই টিকাগ্রহিতা এন্ট্রি হয়েছে ৭৩২ জন। যাদের ইউনিয়ন সচিবদের মাধ্যমে খুব সহজেই নিশ্চিত করা হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সেবা। মানসিক কাউন্সিলিংয়ের জন্য এখানে আবেদন পড়েছে ৮টি।

উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার ওয়াশিকুর রহমান জানান, এই অ্যাপটি তৈরি করতে ২০২২ সালের ফেব্রয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফিল্ড ওয়ার্ক ও আর্কিটেকচারাল লেআউট ডিজাইন করা হয়। এরপর ওই ডিজাইন অনুসারে একই বছরের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মোবাইল অ্যাপস তৈরি করা হয়। 

ওই বছরের আগস্ট মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অ্যাপসটি পরীক্ষামূলক চালু করা হয়। একই সময়ে স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। পরে ওই বছরের অক্টোবর মাস থেকে পুরোপুরি চালু করা হয় ‘নিরাময় অ্যাপ’।

২নং জোড়াদহ ইউনিয়ন সচিব সৌরভ কুমার কুন্ডু জানান, আগে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাচ্চাকে শনাক্ত করা খুবই কঠিন ছিলো। নিরাময়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীরা ইপিআই টিকাগ্রহীতার তথ্য এন্ট্রি দেয়ার সাথে সাথে আমরা সেটি দেখতে পাই এবং গ্রাম পুলিশের সহায়তায় দ্রুত জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করে দেন এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন। 

ইউএনও সুস্মিতা সাহা বলেন, একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা মানুষের হাতের মুঠোই পৌঁছে দিতে চালু করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক মোবাইল অ্যাপস ‘নিরাময়’।

টিএইচ