উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার অর্ধশত গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীতীরের হাজারো মানুষ।
চোখের সামনে নিমিষেই যমুনার পেটে চলে যাচ্ছে- বসত-ভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। ফলে ভাঙন কবলিত মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। সরিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। অসহায়ভাবে নিরবে ভাঙন দেখছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগও কোনো কাজে আসছে না।
টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির গত শনিবার ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটাসহ ভাঙনকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়াসহ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটল; কালিহাতীর আলীপুর ও হাট আলীপুর; সদর উপজেলার চরপৌলি; নাগরপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সলিমাবাদ, পশ্চিম তেবাড়িয়া, খাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা মাইজাইল, ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, বাদে কাকনা ও কৃষ্ণ দিয়ার কুল, দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর, বাককাটারি, বাজুয়ার টেক, ছিটকি বাড়ি ও মির্জাপুর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ অর্ধশত গ্রামে যমুনার তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে ত্রাণ সহায়তা নয় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে যমুনা নদীতে আশঙ্কাজনকহারে পানি বাড়ছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলে তিল ও পাটসহ নানা ধরণের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী। মানবেতর জীবনযাপন করছে ভাঙনকবলিতরা।
যমুনার ভাঙনের শিকার ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙনে সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তার থাকার জায়গাটুকুও নেই। ৫-১০ কেজি সরকারি অনুদানের চাল দিয়ে কি করবেন? এসব দরকার নেই। ভাঙন কবলিতরা ত্রাণ চান না, ভাঙনরোধে বাঁধ চান।
গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, শনিবার এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তার নির্দেশনায় ক্ষতিগস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। বন্যা মৌসুম পাড় হওয়ার পর এই প্রকল্পের আওতায় নাগরপুর অংশের কাজ করা হবে। এছাড়া ভূঞাপুর অংশে ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যেটুকুতে বাঁধ নির্মাণ বাকি রয়েছে আগামীতে বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
টিএইচ