যশোরের মণিরামপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের এক মাসের বেতন ঘুষ হিসেবে নেয়া টাকা দুই বছর পর ফেরত চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার মণিরামপুর উপজেলার হাজরাকাঠি দারুল উলুম মহিলা আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এতে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, বেসরকারি শিক্ষকদের পাঠদান ব্যতিত অন্যকোন কাজে সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। ফলে দুর্নীতি-অনিয়ম করার মতো কোন ক্ষেত্রও নেই। অথচ, ২০২২ সালের মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধিনস্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তা ড. এনামুল হক নামের এক কর্মকর্তা ‘মিনিস্ট্রি অডিটের’ নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাবিধ ভয় দেখিয়ে পুরো একমাসের বেতন ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন।
শিক্ষকরা আরও উল্লেখ করেন, অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষকরা যা বেতন পান তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। তারপরও মাস শেষে হাতে গোনা বেতনের টাকা উত্তোলন করে সংসারের কেনাকাটা, বাচ্চাদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও ঋণের কিস্তি দেন। কিন্তু সেই টাকাগুলো জোরপূর্বক ঘুষ দিতে বাধ্য হয়ে অনেকেই অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
এমনকি বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানোর পরে ওই কর্মকর্তা ফের চাপসৃষ্টি করে ‘আমরা ঘুষ দেয়নি মর্মে প্রস্তুত করা চিঠিতে’ স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে দুদক ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করলেও খুব বেশি অগ্রসর হতে দেখা যায়নি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার লোক তদন্তে আসলে ওই কর্মকর্তার অনুসারীরা আমাদের পেনশন আটকে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অস্বীকার করাতে বাধ্য করেন। এসব ভয় উপেক্ষা করে যারা সত্য বলবেন তাদের স্বাক্ষী নেয়নি তদন্তকারীরা।
অভিযোগে বলা হয়, অডিট কর্মকর্তা অডিট করতে এসে ঘুষের ভাগ নেতা এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও দেয়া লাগে। যা অনেক শিক্ষক গোপনভাবে রেকর্ড করে। ওই কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিক্ষকদের মধ্যে জানতে পারেন, ড. এনামুলের স্ত্রী মহিলা আ.লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং স্বামীর অবৈধ টাকার জোরে দুবার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন।
এছাড়াও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি নিয়ে দীর্ঘকাল ডিআইয়ের একই চেয়ারে বসে সারাদেশের শিক্ষকদের জিম্মি করে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই টাকায় এলাকায় শত শত বিঘা আমের বাগান ও মৎস্য খামার, ঢাকায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন।
এতে সাধারণ শিক্ষকরা অবৈধ ক্ষমতার ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। বিশেষ করে, সে সময় দেশে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলার কিংবা প্রতিবাদ করার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না বলেও উল্লেখ করা হয়।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতায় দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার এবং প্রতিবাদ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে শিক্ষকরা অবিলম্বে তদন্তপূর্বক ঘুষের টাকা ফেরৎ পেতে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে মানবিক আবেদন জানিয়েছেন। অন্যথায়, কষ্টের বেতনের টাকা আদায়ে তাদের রাস্তায় নামা ব্যাতিত কোন পথ খোলা থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন।
টিএইচ