শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

রাজশাহী-মুশিদাবাদ নৌপথ চালু: নৌ-বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত

মুক্তাদির আহমেদ, গোদাগাড়ী (রাজশাহী)

রাজশাহী-মুশিদাবাদ নৌপথ চালু: নৌ-বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ প্রটোকলের আওতায় চালু হলো বহুল কাঙ্খিত রাজশাহী-মুশিদাবাদ নৌপথ।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল এবং সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আর ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের উদ্বোধন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে সুলতানগঞ্জ পদ্মা-মহানন্দা নদীর মোহনায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী   বলেন, সুলতানগঞ্জ–মায়া নৌবন্দর চালুর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের যে উঞ্চতা রয়েছে তা আরো বৃদ্ধি পাবে। এই নৌবন্দর দিয়ে পণ্য আনা নেয়া সহজ হওয়ায় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। পাথরসহ যে কোন পণ্য আমদানিতে অনেকাংশই বৈদেশিক মুন্দ্র সাশ্রয়ী হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ হিসাবে রূপদান করা হবে।

সভায় বিশেষ অতিথি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌবন্দর চালু হওয়ায় ভারতের ৭টি প্রদেশ থেকে পণ্য আনা সহজ হলো। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ  বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নে ভারত সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে নৌপথটি গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী ও পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত গেছে। দীর্ঘদিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। আমি গত পাঁচ বছর বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, লেখালেখি ও ডিও লেটার দিয়েছি। ফলে এটা গতিশীল হয়েছে।

বিশেষ অতিথি রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌবন্দর চালুর কারণে এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে করে রাজশাহী অঞ্চলে অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যাবে।

সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ, রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌরসভা মেয়র অয়েজউদ্দীন বিশ্বাস, কাকনহাট একেএম আতাউর রহমান গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর ইসলাম, চাপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসমিনা খাতুন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।

উল্লেখ্য যে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-মায়া গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য চালু ছিল। পরে রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। আজ বাংলাদেশ সীমান্তের সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনের পরে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদী বন্দরের মর্যাদা পেলো। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। বছরে ৪ হাজার ১৩৯ ট্রিপ পণ্যবাহী কার্গো চলাচল করবে। এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বছরে এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। এর আগে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য চালুর।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্যতা সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি।

ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া হবে। শুরুতে এই নৌপথে ভারত থেকে পাথর বালি ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী আনা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে মায়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার।

সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণের পদ্মার শাখা নদী মহানন্দার মোহনার কাছাকাছি। সারাবছর সুলতানগঞ্জের এই পয়েন্টে গভীর পানি থাকে।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মায়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-মায়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হওয়ায় পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।প্রথমদিন বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে এবং ভারত থেকে পাথরবাহী কার্গো দুপুর দুইটায় সুলতানগঞ্জ বন্দরে আসে।

টিএইচ