শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Post

রায়পুরার ইউএনও মো. ইমরান খানের কর্মময় অভিযাত্রার এক বছর

রাকিবুল ইসলাম, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)

রায়পুরার ইউএনও মো. ইমরান খানের কর্মময় অভিযাত্রার এক বছর

সরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে জনগণের রয়েছে অনেক অভিযোগ। এর মধ্যে ব্যতিক্রম জনবান্ধব, পরিশ্রমী লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরান খান। দায়িত্ব নেয়ার এক বছরে উদ্ভাবনী চিন্তা, নিষ্ঠা ও মানবিক নেতৃত্বে এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করে নিয়েছেন এই সৎ নির্বাহী কর্মকর্তা।

রায়পুর উপজেলায় যোগদান করে এক বছরেই তার সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকাণ্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান।

রায়পুর উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরালসভাবে কাজ করছেন তিনি। জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সৎ জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

স্থানীয়রা বলেন, তিনি সর্বদা ছুটে বেড়ান উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন আর পৌরসভায়। ক্লান্তিবোধ হয়ত তাড়া করেনা তাকে। ইভটিজার,পারিবারিক জটিলতায় কিংবা বাল্য বিবাহে ছাড় নেই তার। উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্যবর্ধন, আগত সেবা প্রত্যাশীদের যথাযথ সেবা নিশ্চিতকরণ, উপজেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম দক্ষতার সঙ্গে তদারকি, উপজেলায় চারপাশে চলার পথ ও দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন কাজও করেছেন তিনি।

শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করেন। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের গুণগত এবং লেখাপড়ার জন্য মানসম্মত বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার নানা কার্যক্রম করেছেন ইতোমধ্যে। কখনো কলেজ, মাদ্রাসা, বিদ্যালয়ে ইউএনওর ঝটিকা অভিযানের ফলে নিয়ম মাফিক চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম।

বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করেছেন জমকালো ভাবে। তরুণ স্বেচ্ছাসেবী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের ‍‍`আইডল‍‍` হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন ইতোমধ্যেই।

উপজেলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে ২৭  মার্চে তিনি রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি রায়পুর উপজেলা প্রশাসনকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজান। তার সততা ও কর্মদক্ষতায় উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করে। কমে যায় জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পায় জনসেবার মান।

উপজেলার যেকোনো অবৈধ ও অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার। তিনি কোনো অভিযোগ পেলে তার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন। তা ছাড়া গণমাধ্যম, ফেসবুক, মুঠোফোনের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। ই-নথি ব্যবস্থায় শতভাগ অগ্রগতি, অনলাইন আবেদন ও অভিযোগ নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সফলভাবে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রতিটি স্কুলে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বিতরণ  ও নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন তিনি।

রাস্তা, কালভার্ট এবং সরকারি স্থাপনার নির্মাণ ও সংস্কার কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করার মাধ্যমে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করণ, ঋণ সহায়তা, কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে তিনি এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

ইউএনও ইমরান খান ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, শীতবস্ত্র ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। গত বন্যার সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন ইউএনও মো: ইমরান খান। তার এই সফল ব্যবস্থাপনার স্বীকৃতিস্বরূপ ‍‍`বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন‍‍`-এর নেতাকর্মীরা তাকে ক্রেস্ট প্রদান করে সম্মাননা জানিয়েছেন।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউএনও ইমরান খান যেভাবে দুর্যোগকালে সমন্বয় সাধন করে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, তাতে মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সেবামূলক মনোভাব প্রশাসনের অন্যান্য স্তরেও অনুসরণীয় হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

ইউএনওর এসব সাফল্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে রায়পুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম আর সুমন বলেন, ‘সরকারের একজন উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং মানবসেবক হিসেবে ইউএনও অসাধারণ একজন মানুষ। সরকারের অর্পিত প্রতিটি দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সাথে তিনি সঠিকভাবে পালন করেছেন। তার ভালোবাসা এবং সততায় রায়পুরের আপামর জনসাধারণ মুগ্ধ।

পৌর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম আলমাস বলেন, ইউএনও সাহেব যেভাবে মানুষের সাথে মিশে গেছে সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। এলাকার লোকজন তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন- ‘কাল কখন অফিসে থাকবেন,আমাদের একটি সমস্যা নিয়ে আপনার কাছে আসবো’ আসলেই তিনি সাধারণ মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন।

ইউএনও ইমরান খান বলেন, ‌‘রায়পুরকে একটি স্মার্ট ও নাগরিকবান্ধব উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতেই আমার সব উদ্যোগ। এই অর্জন একার নয়—জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বিত চেষ্টারই ফল।’

টিএইচ