শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

রেকর্ড বৃষ্টিতে সৈয়দপুরে বন্যা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত জনজীবন

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

রেকর্ড বৃষ্টিতে সৈয়দপুরে বন্যা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত জনজীবন

চারদিনের অবিরাম বর্ষণে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভাসহ উপজেলার সব ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল হাটুপানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। গত শনিবার রাত থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৩৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে রেলওয়ে কারখানাসহ শহরের প্রায় সব পাড়া মহল্লার অলিগলি পথ, নিচু বাড়িঘর ও পুকুর ডোবায় থৈ থৈ পানি। 

আর গ্রামাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত, মাছের খামার তলিয়ে যাওয়াসহ চারপাশে বর্ষার পানির ব্যাপক সমারোহ। অভাবনীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সর্বস্তরের জনজীবন।

দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে অলিগলি পেরিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক, শহীদ ডা. সামসুল হক সড়ক, পৌরসভা সড়কেও হাঁটুপানি জমে একাকার। পৌর এলাকার বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রীপাড়া, হাতিখানা, নিচু কলোনী, মুন্সিপাড়া, কয়ানিজপাড়া, গোলাহাট, নিয়ামতপুর জুম্মাপাড়া, আতিয়ার কলোনী, কাজিপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, বাঙগালীপুর নিজপাড়াসহ প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলো পানির নিচে।

এসব এলাকার অনেক বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বাজারের দোকান ও গোডাউনেও একই অবস্থা। ফলে বাসার আসবাবপত্র ও দোকানের মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। কাঁচামাল পঁচে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। এতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। 

একদিকে পানিবদ্ধতা, অন্যদিকে উপার্জনহীন। তার উপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ চরম সমস্যায় পড়েছেন। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে এবং পানিবন্দি মানুষ চুলা জ্বালাতে না পেরে অনাহারে রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বৃষ্টির পানির আধিক্যের ফলে নিম্নাঞ্চলসহ অনেক উঁচু এলাকাতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ধানের ক্ষেত, পুকুর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও পানির স্রোতের চাপে রাস্তা ভেঙে গেছে। সবজির ক্ষেত নষ্ট হওয়াসহ পুকুর ডুবে মাছ বেরিয়ে গেছে। বিশেষ করে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিবাসীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

পৌরবাসীর অভিযোগ ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। একারণে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সেখানে এত বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের অসচেতনা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই সৈয়দপুরের এই দূরাবস্থা। পরিকল্পিতভাবে ধারাবাহিকতার সাথে অচল ড্রেন মেরামত, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নতুন ড্রেন নির্মাণ ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করলে এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

 সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএসডাব্লিউ) সাদেকুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টিতে কারখানার কয়েকটি সপে (উপ-কারখানা) পানি জমেছে। এতে কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বিদ্যুৎ না থাকায় সপগুলো বন্ধ রয়েছে। 

পার্বতীপুর ক্যারেজ লোকোমেটিভ কারখানায়ও (কেলোকা) একই অবস্থা। পানি নিষ্কাশনের জন্য সৈয়দপুর পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায় এমন পানিবদ্ধতার সমস্যা বলে মন্তব্য করেন তিনি। এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

এবিষয়ে সৈয়দপুর পৌরমেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী মুঠোফোনে বলেন, বৃষ্টি প্রাকৃতিক ব্যাপার। এটা আটকানো বা হওয়ার পর পানি সরানোর কোন ব্যবস্থা মানুষের হাতে নেই। শহরের ডোবা তথা জলাধারগুলো দখল ও ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এব্যাপারে আমরা পরিষদগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছি। তবে জনগণের অসহযোগিতার কারণে সফল হতে পারিনি। আগামীতে এদিকটাই গুরুত্বের সাথে দেখা হবে। 

টিএইচ