রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলা ও পশ্চিমাঞ্চল মিলে ৭ হাজরের অধিক অস্থায়ী কর্মচারী ছাঁটাই করছে। ছাঁটাই হওয়া এবং হতে যাওয়া কর্মচারীদের সংগঠন আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। যাদের ছাঁটাই করছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হওয়ার আশায় কাজ করে গেছেন। অনেকের সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে গেছে।
তাদের ছাঁটাই করে নতুন নিয়োগের খবর শোনা যাচ্ছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। জানাগেছে, ১৬ পদে লোকবল নিয়োগের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে।
২০২০ সালের নিয়োগ বিধিতে তাদেরকে বেসরকারিভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর চলতি বাজেটে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) অস্থায়ী কর্মীদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই উল্লেখ করে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে রেলওয়ে।
রেলওয়েতে বর্তমানে ৪৭ হাজার ৬৩৭ জনবলের অনুমোদন রয়েছে। এর বিপরীতে কর্মরত আছে প্রায় ২৫ হাজার। বাকি প্রায় ২২ হাজার পদ শূন্য।
তীব্র জনবল ঘাটতি সত্ত্বেও ছাঁটাই করছে রেলওয়ে। উচ্চ আদালতের অন্তত ছয়টি রায়ে রেলওয়ের প্রায় এক হাজারেরও বেশি অস্থায়ী কর্মচারীকে স্থায়ী করতে বলা হয়। এ নিয়ে গঠিত হয় বিশেষজ্ঞ কমিটিও। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না করে নতুন নিয়োগের পথে হাঁটছে রেলওয়ে।
রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করতে আদালতের রিট পিটিশনে অন্তত ছয়টি রায় কর্মচারীদের পক্ষে এসেছে। এছাড়া আরো আড়াই হাজার অস্থায়ী কর্মচারীর করা অন্তত ১৫টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এছাড়াও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, ও মহাপরিচালকের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছেন। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত সকল টিএলআর শ্রমিকদের সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বেতন দেয়া হয়। কিন্তু ১ জুলাই থেকে কোন বাজেট বরাদ্দ বা চাকরির মঞ্জুরী এখনো হয়নি।
বেতন ছাড়া দীর্ঘদিন শ্রমিকেরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারপরেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন সকল টিএলআর অস্থায়ী শ্রমিকরা।
রেলওয়ে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে রেলওয়েতে ৩ বছরের অধিক সময় কর্মরত অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিকদের রেলওয়েতে স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে। এরপর রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সে কমিটি পরবর্তী কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অস্থায়ী (টিআরএল) শ্রমিকদের বেশীরভাগই রেলওয়ের অপারেশনাল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত গেইট কিপার, পয়েন্টস ম্যান, পোর্টার, বিদ্যুৎ, ক্যারেজ ও অন্যান্য।
বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো। আমাদের যাওয়ার কোন পথ নেই। এটা অমানবিক।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রেলওয়ে একটি বিশেষায়িত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। রেলের অনেক সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মচারীদের। নিয়োজিত টিএলআররা নানা বিষয়ে আন্তরিকতাসহ রেলের সম্পত্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। রেলওয়ের স্বার্থ ও মানবিক বিবেচনায় শুরু থেকেই বলেছি আমরা আউটসোর্সিং চাই না। রেলের নতুন আইনে এটা বাতিল করতেও বলা হয়েছে।
রেলওয়ে টিএলআর শ্রমিকদের সংগঠনগুলো এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়েছেন। সকল টিএলআর শ্রমিকদের চাকরি বহাল করে তাদের স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে রেল মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, তারা ছিলেন টেম্পোরারি। তারা অভিজ্ঞ। তাদের আসতে হলে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আসতে হবে। তারা আসলে আমরাও খুশি। আন্দোলন না করার জন্য অনুরোধ করেন।
টিএইচ