সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

শঙ্খ নদীতে সেতু হলে বদলে যাবে দু উপজেলাবাসীর ভাগ্য

চন্দানই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

শঙ্খ নদীতে সেতু হলে বদলে যাবে দু উপজেলাবাসীর ভাগ্য

দোহাজারী পৌরসভাস্থ লালুটিয়া চৌকিদার ফাঁড়ি শঙ্খ নদী পারাপারে চন্দনাইশ-সাতকানাির প্রায় ৪০ গ্রামবাসীর একটি সেতুর স্বপ্ন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন পর গত সরকারের আমলে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার ব্রিজ। 

গত বছরের ৭ নভেম্বর ব্রিজ নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর একনেকের সভায়ও এ সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়নি। অতএব, শঙ্খ নদীর দুই পাড়ের মানুষের স্বপ্ন কবে নাগাদ পূরণ হবে, তাতে ফের অনিশ্চয়তা জেগেছে। 

ব্রিজটি নির্মাণ হলে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হতো। খরস্রোতা শঙ্খ নদীর কারণে শত শত বছর থেকে বিভাজন ছিল চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড়ের। সেই সঙ্গে চন্দনাইশের ধোপাছড়ি, সাতকানিয়ার বাজালিয়াসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নের জনসাধারণকে নৌকাযোগে এ নদী পেরিয়ে আসা-যাওয়া করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। 

বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ আরও চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাছাড়া নৌকায় এ নদী পাড় হতে প্রতিবার ১০ টাকা প্রদান করতে হয়। এছাড়া বর্ষাকালে নদীতে বেশি পানি হলে তখন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া গুণতে হয় এ দুই উপজেলার মানুষের। শুধুমাত্র ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু শঙ্খ নদীর উপর নির্মাণ করা হলে দুই পাড়ের সেতুবন্ধন রচনা হতো। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও এপার-ওপারের মানুষের দুর্ভোগের শেষ হয়নি হয়নি। 

দোহাজারী পৌরসভা ও পুরানগড় ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নগুলোর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভাজনের একটি ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে খরস্রোতা শঙ্খ নদীর জলরাশির মধ্যদিয়ে। 

দুই পাড়ের পূর্বপাড়ের প্রায় ৫০টি গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সবারই দুর্ভোগ লেগে থাকে সারা বছর। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিবারই দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসলে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ভোট চাইতে এসে লালুটিয়া চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেতেন। কিন্তু বাস্তবতার বিষয়টি ছিল ভিন্ন। 

জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার দুয়ারে পৌঁছে যাওয়ার পর কেউ আর তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার ন্যূনতম সৌজন্যবোধ দেখায়নি শঙ্খ নদীর দুই পাড়ের মানুষের স্বপ্নের এ সেতুটি গড়াতে। গত বছর ৭ নভেম্বর সেতুটি নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এরপর আর কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 

সরেজমিন দেখা যায়, শঙ্খ নদীর পশ্চিম পাড়ে চৌকিদার ফাঁড়ি থেকে নৌকায় ওপারের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। নৌকাযাত্রীদের মধ্যে জসীম, কালাম, বাবর, সুভাষ দাশ বলেন, তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন চৌকিদার ফাঁড়িতে ব্রিজ নির্মাণের। কবে নাগাদ এ সেতুর কাজ শুরু হবে, সে সংশয় কাটেনি এখনও তাদের। 

ইতোমধ্যে কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ অসীম উদ্দীন, পরিবেশ পরামর্শক আশরাফুল আলম, অর্থ পরামর্শক আশীষ ধর ও চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশলী যথাক্রমে মো. বেলাল হোসেন ও জুনাইদ আবছার চৌধুরী। 

এ সেতুটি নির্মাণ হলে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সাথে যেমন সংযোগ সাধিত হতো, তেমনি নৌকায় শঙ্খ নদী পারাপারের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতো হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি দুই পাড়ের হাজার হাজার কৃষকের তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হতো।

টিএইচ