মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Post

শাহজাদপুরে গ্রামবাসীর চাঁদায় ১.৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

শাহজাদপুরে গ্রামবাসীর চাঁদায় ১.৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ও জালালপুর ইউনিয়নের চর বেলতৈল এবং মূলকান্দী মোল্লা পাড়া গ্রামের মানুষ চলাচলের জন্য পায়নি রাস্তা। তাই স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেড়িয়ে গেলেও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কেবল পেয়েছেন প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সামান্য পায়ে হাটার রাস্তা তৈরিরও উদ্যোগ নেয়নি কেউ। 

এজন্য চর বেলতৈল এবং মূলকান্দী মোল্লা পাড়া গ্রামসহ টোক পাড়া, গাবের পাড়া, চৌবাড়ীয়ার প্রায় ১০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ যেন আজন্ম সঙ্গী। অথচ এই গ্রামগুলোতে অন্তত ১শ বছর আগে থেকে বসতি গড়ে উঠেছে। 

বর্ষাকালে নৌকাযোগে চলাচল করলেও বাকীটা সময় জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। বিশেষ করে অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে হলে কষ্ট যেন আকাশ ছোঁয়। এরপর গ্রামের কেউ মারা গেলে কবর পর্যন্ত পৌঁছাতে দূর্বিপাকের শেষ থাকে না গ্রামবাসীর। এরপর স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তো সীমাহীন ভোগান্তি নিত্যদিনের। সমপ্রতি ঐ গ্রামের একজন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে সন্তান প্রসবের জন্য কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঘটেছে মর্মান্তিক ঘটনা। পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সন্তান প্রসব হয় এবং মারা যায়। সেই গৃহবধূও এখন রয়েছেন চিকিৎসাধীন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চর বেলতৈল এবং মূলকান্দী মোল্লা পাড়া গ্রামের মানুষ তাদের নিজ খরচে তৈরি করছে ১২ ফিট প্রস্থের দেড় কিলোমিটার মাটির রাস্তা। আর এই নির্মাণ কাজে গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যে যার মত করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি এক্সেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে পাশের সরু জলা থেকে মাটি তুলে চলছে নির্মাণ কাজ। আর গ্রামবাসীর স্বপ্নের রাস্তাটিতে যেন কোনরকম খাঁদ না থাকে তার জন্য যার যার বাড়ির সামনে কোদাল-টুকরি নিয়ে কাজে লেগে পড়ছেন নিজেরাও।

গ্রামবাসীর এই কাজে যিনি প্রতিনিয়ত উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন তিনি ইঞ্জিনিয়ার আল মাহমুদ। ইঞ্জিনিয়ার আল মাহমুদ জানান, তার নিজ গ্রামেও চলার কোন রাস্তা ছিলো না বছরখানেক আগেও। তাই তার পিতা অসুস্থ হলে রাস্তা না থাকায় সময় মত হাসপাতালে নিতে পরেননি বলে মারা যায়। সেই থেকে স্যোসাল মিডিয়ায় নিয়মিত বিভিন্ন রাস্তার জনদুর্ভোগ নিয়ে কথা বলে চলছেন।

বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসী উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি তৈরি করেছে। ওখানে আমরা প্রকল্প দিয়ে আরও সুন্দর করবো। সেইসাথে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।

এদিকে নিজেরাই নিজেদের চলার পথ তৈরি করতে পেরে গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে উৎসব আমেজ। এ অঞ্চলের বসবাসরত ১০ হাজার মানুষের চলাচলের পথ তৈরি করে পেয়েছে শতবর্ষের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি আর কাঙ্খিত স্বপ্নের ঠিকানা।

টিএইচ