লোহার চাকতি লাগানো শিকল দুই পায়ে পরানো হয়েছে। আর সেই শিকলে লাগানো হয়েছে ২টি বড় তালা। দিনে বাড়ির সুপারি গাছের সাথে আর রাতে ঘরে চৌকির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ১২ ফুটের শিকলে এক যুগের বেশি সময় ধরে বাঁধা মানসিক প্রতিবন্ধী লিটনের (৩৭) জীবন। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নের আকন্দপাড়া গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
জানা যায়, লিটনকে ছেড়ে দেয়া হলে স্থানীয় বাজারে ঘোরাঘুরি করে। অধিকাংশ সময় থাকে চুপচাপ। কেউ কাছে গেলে কোন কথাই বলে না।
লিটনের বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, দুই ছেলের মধ্যে লিটন ছোট। জন্মের পর থেকে বছর বিশ পর্যন্ত সে ভালো ছিলো। সানন্দবাড়ী বাজারে বাবার চালের দোকান দেখভাল করতো। কিন্তু কিছুদিন পর হঠাৎ পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে লিটন। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও কবিরাজ দিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সুস্থ হয়নি। সুযোগ পেলেই এদিক-সেদিক চলে যায়। এজন্য বাধ্য হয়ে পায়ে শিকল পরিয়ে আটকে রাখা হয় তাকে।
লিটনের মা জানান, ওর বাবা ৫ বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, ফলে সংসারের উপার্জন করার মতো কেউ থাকে না। অভাবের সংসারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনের উৎস। অসুস্থতার পর মানুষের সহযোগিতায় কোন মতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে।
লিটনকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। মায়ের হাতে ছাড়া খাবার খায় না সে। তিনি আরো বলেন, আমরা এখন অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছি। কারও আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসা পেলে লিটন সুস্থ হয়ে উঠবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ্ আলম বলেন, তার কোন সরকারি সহায়তা/ ভাতার কার্ড নাই। তবে কোন সহায়তা আসলে তাকে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ইউএনও কামরুন্নাহার শেফা বলেন, লিটন শিকলবন্দি এ কথা আমার জানা নেই। তার পরিবার যোগাযোগ করলে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সে যদি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে তাহলে তার প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেয়া হবে।
টিএইচ