কৃষি, খাদ্য ও শষ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল শেরপুরে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে আলুক্ষেতে দেখা দিয়েছে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ। ক্ষেত থেকে আলু তোলার শেষ সময়ে ওই রোগে আক্রান্তে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আলু চাষিরা।
সার কীটনাশকের চড়া দামের সঙ্গে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ দমনে স্প্রে কিনতে বাড়তি খরচ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে কৃষকের জন্য। এদিকে মাঠ পর্যায়ে রোগ প্রতিকারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার আলু চাষি হেলাল মিয়া জানান, এবার এক একর জমিতে করেছিলেন আলুর আবাদ। ভারী কুয়াশা ও বাড়তি ঠাণ্ডায় শেষ সময়ে লেট ব্লাইটে আক্রান্ত হয়ে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার। তিনি বলেন, আমার প্রতি কাঠায় ৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন উঠছে মাত্র ৩ হাজার টাকা করে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও অধিক লাভের আশায় তার মত আলুচাষে নেমেছিলেন শেরপুরের অনেক কৃষক।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার ৫ হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে আলুক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাবে দিশাহারা স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, আলু রোপণের দেড় থেকে ২ মাসের মাথায় গাছের কান্ড ও পাতা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। বার বার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আলুর গাছ বাঁচাতে পারছেন না কৃষকরা। এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা।
এবার আলু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। শুধু গোল আলুই না, বীজ আলুও লেট ব্লাইটে আক্রান্ত হয়েছে। এবার বীজ আলু নিয়েও বিপাকে পড়তে হবে স্থানীয় কৃষকদের। যারা বিএডিসির চুক্তিভিত্তিক চাষি, তারাও এবার চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বে বলে আশংকা আলুচাষিদের। তাদের খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কায় আছে কৃষকরা।
এদিকে গত মৌসুমে আলুতে লাভ বেশি পেয়ে অনেকেই এবার ধার-দেনা ও ব্যাংক ঋণ করে আলুচাষ করেছিলেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। সময়মতো কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মাঠকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক এনে প্রয়োগ করলেও, তেমন কাজে আসছে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছ। এ থেকে উত্তরণে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছি।
টিএইচ