শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

সরিষাবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুত্রবধূর চাকরি

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি

সরিষাবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুত্রবধূর চাকরি

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে শ্বশুরকে জন্মদাতা পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাফিয়া খাতুন মিতুর বিরুদ্ধে এমন জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। 

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ভাটারা ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের জুলারখুপি গ্রামের বাসিন্দা। তার পরিবারে রয়েছে দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ের নাম রহিমা আক্তার ও দ্বিতীয় ছেলের নাম শফিকুল ইসলাম (খোরশেদ) এবং ছোট ছেলের নাম খায়রুল ইসলাম (খোকন মিয়া)। বীর মুক্তিযোদ্ধার ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন মিয়া মাদারগঞ্জ উপজেলার সরদাবাড়ী গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর সঙ্গে বিয়ে হয়।

বিয়ের সময় মাফিয়া খাতুন মিতু রায়েরছড়া সরর্দাবাড়ী মডেল একাডেমি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। নবম শ্রেণিতে পড়াশোনাকালীন এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফরমে (নং- ৬৫১৮৯৯) তার পিতার নাম (হাসান আলীর) পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা শশুর (আব্দুর রহমান) এর নাম লিপিবদ্ধ করেন। এদিকে শুরুতে তিনি ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন তার তার পিতা মো. হাসান আলীর পরিচয়ে। 

পরে তারপর নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রেও তার পিতার নামের পরিবর্তে শ্বশুরের নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র করেন। যার জাতীয় পরিচয়পত্র (নং-৮২২২০৯৫৬১৭)। পরে ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তখন থেকে সার্টিফিকেট অনুযায়ী সে জন্মদাতা পিতা হাসান আলীর পরিবর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের জন্মদাতা মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। 

সেই সুবাদে মাফিয়া খাতুন (মিতু) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৭/০১/১৬ ইং তারিখে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে উপজেলার ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। 

এ বিষয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর (ভাসুর) মো. শফিকুল ইসলাম খোরশেদ মুঠোফোনে বলেন, সহকারী শিক্ষিকা মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। সে তার কাগজপত্রে কিভাবে আমার বাবার নাম ব্যবহার করতে পারে। আমার বীর মুক্তিযুদ্ধা পিতা তার জন্মদাতা হতে পারে না। 

অভিযুক্ত শিক্ষিকার স্বামী খায়রুল ইসলাম খোকনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হন নি।

এ-ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা মাফিয়া খাতুন মিতু কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি রাজি নয় বলেও মতপ্রকাশ করেন।
এ-বিষয়ে মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, কিভাবে তিনি চাকরি নিয়েছেন সেটা আমি জানি না। তবে তার যোগদান পত্রটি আমাদের কাছে আছে।

এ-ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিন জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ওই শিক্ষিকার সব কাগজপত্র চেয়েছি। অতিদ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন খান জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত রিপোর্ট পেলে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ওই শিক্ষকের বিষয়ে শুনেছি। তার বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টিএইচ