বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

সাপাহারের আম বাজারে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি

সাপাহারের আম বাজারে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি

দেশের চলমান পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে দেশের আমের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত নওগাঁর সাপাহারে গত কয়েক দিনে আমচাষীদের প্রায় ৫ থেকে ৬শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে একাধিক আমচাষি, বাগানমালিক ও আম সংশ্লিষ্টজনরা মনে করছেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে নওগাঁয় আমের সর্ববৃহত আমের বাজার সাপাহার হতে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হয়ে থাকে, তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর প্রকৃতিগতভাবে আমের বিপর্যয় হলেও বাজারের শুরুতেই আমের দাম ভাল থাকায় এখানকার আমচাষিরা তাদের লাভ ক্ষতি কিছুটা হলেও পুশিয়ে নেয়ার আশা করছিল। 

কিন্তু হঠাৎ দেশে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দেশে কারফিউ জারি করে। সরকার জারিকৃত কারফিউতে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের পণ্যবাহী পরিবহনের আওতামুক্ত থাকলেও দেশের বৃহত এই আমবাজারে আম ব্যাপারীরা গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার অজুহাতে বেশ কয়েকদিন আম কেনা বেচা হতে মুখ ফিরিয়ে নেন ফলে চরম বিপাকে পড়ে এখানকার আমচাষিরা। 

কারফিউ চলাকালেও আমচাষিরা বিক্রয়ের আশায় তাদের উৎপাদিত আম বাজারে নিয়ে এসে রাস্তার পাশে সারাদিন বসে থাকে এতে রাস্তায় যানজটেরও সৃষ্টি হয়। দিন শেষে ব্যাপারীরা সাময়িক সিন্ডিকেট তৈরি করে সন্ধার পর রাতের আঁধারে চাষিদের আম অর্ধেক দামে কেনা বেচা শুরু করে এবং চাষিরাও নিরুপায় হয়ে অর্ধেক দামে আম বিক্রিয় করে বাসায় ফিরেন।

এ বিষয়ে সাপাহার আমচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, আম কেনা বেচা শুরু থেকেই ব্যাপারীরা কৃষক ঠকানোর মিশনে নেমে ৫২ কেজিতে ১ মন আম ক্রয় শুরু করেন। পরে এ বিষয়ে অনেক আন্দোলন দেনদরবার এমনকি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও সাপাহারে সরকারি এক সফরে এসে কৃষক বাঁচানোর জন্য সর্বসাকুল্যে ৪৮কেজিতে ১ মন নির্ধারণ করে আম কেনা বেচার ঘোষণা দেন। 

শেষে কোন কাজ হওয়ায় চাষি ও ব্যাপারীরা ৫২কেজিতেই মন হিসেবে আম কেনা বেচা শুরু করেন। এরইমধ্যে দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী নৈরাজ্যে সৃষ্টি হলে সরকার তা নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কারফিউ জারি করলে ব্যাপারীরা আবারও সিন্ডিকেট তৈরি করে চাষিদের আম অর্ধেক দামে কেনা শুরু করে ফলে চাষিরা দ্বিতীয় দফায় ক্ষতির সম্মুখীন হন। 

সাপাহার উপজেলার মদনশিং গ্রামের মফিজ উদ্দীন, পিছলডাঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দীন, গোয়ালা গ্রামের আমিরুল ইসলামসহ অসংখ্য আমচাষি জানান, আম চাষাবাদের প্রারাম্ভে আমরা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হ্রাসের মুখে পড়েছিলাম, আমের বাজার এবছর ভাল থাকায় সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম হঠাৎ দেশের এমন পরিস্থিতিতে কয়েক দিন ব্যাপারীরা আমাদেরকে জিম্মি করে কম দামে আম কেনায় আমরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছি। 

সাপাহার উপজেলা কৃষিবিভাগের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টকি জানান কারফিউর ৫দিনে ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে কম দামে আম কেনায় ৫ থেকে ৬শ কোটি টাকা না হলেও একটা বৃহত এমাউন্টের ক্ষতির মুখে পড়েন এখানকার আমচাষিরা।

বর্তমানে আমের বাজার আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আসায় ও আমের দাম একটু বেশী হওয়ায় আমচাষিদের মনে আবারো স্বস্তির সঞ্চার জেগেছে। বর্তমানে আম্রপালী আম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৭ হাজার ও বারি-৪ জাতের আম সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বেচা কেনা হচ্ছে।

টিএইচ